দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ জুলাই: ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার-২০১৫ পেয়েছেন৷এ বছরের বিশ্ব খাদ্য পুরস্কারের জন্য মনোনিত হন তিনি ৷বুধবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে দেশটির কৃষিমন্ত্রী টমাস ভিলস্যাক এ আবেদের নাম ঘোষণা করেন৷আগামী অক্টোবরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কারের আড়াই লাখ মার্কিন ডলার তুলে দেয়া হবে আবেদের হাতে৷ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ব্র্যাক গড়ে তোলার পেছেনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ৭৯ বছর বয়সী স্যার ফজলে হাসান আবেদকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে৷
মানুষের জন্য খাদ্য সহজলভ্য করতে এবং এর মান উন্নয়নে যারা কাজ করছেন, তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয়৷১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বিপর্যস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ফজলে হাসান আবেদের নেতৃত্বে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১১টি দেশের সাড়ে তের কোটি মানুষ ব্র্যাকের সেবার আওতাভুক্ত৷নের স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে কৃষিমন্ত্রী টম ভিলস্যাক এ পুরস্কারের ঘোষণা দেন৷বাংলাদেশ গ্রামীণ উন্নয়ন কমিটি বা ব্র্যাক প্রারম্ভিক অবস্থায় ১৯৭০ সালে জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত মানুষের সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষা, দারিদ্র্য ইত্যাদি জনহিতৈষী কাজে মনোনিবেশ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি৷ আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে প্রায় ১৫ কোটি মানুষের দারিদ্র্য দূর করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক৷২০১০ সালে ব্রিটেনের নাইটহুড উপাধি পাওয়া স্যার ফজলে হাসান আবেদ (৭৯) বাংলাদেশ থেকে বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক ব্যাপার, এটা কেবল আয় বা কাজের অভাবে হয় না৷ সুযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা এ রকম অনেক কিছুর অভাবে দারিদ্র্য হতে পারে৷
১৯৮৬ সালে নোবেলজয়ী নরম্যান বর্লুগ বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার চালু করেন৷ যাঁরা খাদ্যের মান উন্নত ও এটা সহজলভ্য করেছেন, তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে৷ এর অর্থমূল্য দুই লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা)৷বিশ্ব খাদ্য পুরস্কারের প্রেসিডেন্ট কেনেথ কুইন বলেন, আবেদ সফলভাবে ব্র্যাককে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনে রূপান্তরিত করেছেন৷ তিনি বলেন, যা তাকে সবার থেকে আলাদা করেছে তা হলো, অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্ ও কারো মতে কার্যকর সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেতে এর রয়েছে লক্ষাধিক কর্মী৷ খাদ্য অনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসার কঠিন পথের মুখে থাকা অতিদরিদ্রদের কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারে জোর দেয় সংগঠনটি৷
কৃষি ও গণিতে অন্তর্ভুক্ত কওে এ জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হলো৷ আমাদের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উপকার করার এই দৃষ্টিভঙ্গি, কৃষি মন্ত্রণালয় এটা লালন করে৷ব্র্যাকের হিসাবে ১০০ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলারের কম৷ এবং চরম দারিদ্র্যের নিচে বাস করে আরো লাখ লাখ মানুষ, যাদের আয় অর্ধেক ডলারের কম৷জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, ১৯৯১-৯২ সময়ে বাংলাদেশ দারিদ্র্য ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১০ সালে এটা কমে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে৷আগামী অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডে মইন শহরে পুরস্কারটি স্যার ফজলে হাসান আবেদের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷