সাকা_চৌধুরী_4565465

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১ জুলাই: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা) খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে।বুধবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। আগামী রোববার আসামিপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন মর্মে আদালত আদেশ দেন।২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃতাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

পরে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকার আইনজীবীরা। আপিল আবেদনে মোট ১ হাজার ৩২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রে বিভিন্ন ডকুমেন্টসহ ২৭টি গ্রাউন্ড রয়েছে।বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে (অভিযোগ নং- ৩, ৫, ৬ ও ৮) তাকে ওই শাস্তি দেয়া হয়। এছাড়া তিনটি (অভিযোগ নং-২,৪ ও ৭) অভিযোগে তাকে ২০ বছরের ও দুটি (অভিযোগ নং- ১৭ ও ১৮) অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাকি অভিযোগগুলো প্রমাণিত না হওয়ায় সেসব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা ন্যায় ও অতি প্রয়োজন।সাকা চৌধুরীর আপিল মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। আপিল শুনানির দশম দিনে দুই কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।

আগামী রোববার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করবে আসামিপক্ষ।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চে এ আপিল মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।এটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি বাহিনী ও নিজস্ব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তান্ডব চালিয়েছে।

একই দিনে চার স্থানে পর্যন্ত তান্ডব চালানো হয়। ’৭১-এর এপ্রিল থেকে জুলাই পযর্ন্ত এসব অপরাধ হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর বেশি হামলা করা হয়। যেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যান।তিনি বলেন, এসব অপরাধের চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল এ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দিয়েছে। তার মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল থাকা ন্যায় এবং অতি প্রয়োজন বলে আদালতে আর্জি পেশ করেছি।

এর আগে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান শুনানিতে ট্রাইব্যুনালে মামলায় প্রমাণিত অভিযোগে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য উপস্থাপন শেষ করেন। গত ১৬ জুন শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনালের রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-জেরা এবং রায় সংক্রান্ত নথিপত্র ( পেপারবুক) উপস্থাপন করেছে আসামিপক্ষ। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শুরু হয়ে বুধবার শেষ হয়।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার পর পরই গত ১৬ জুন শুরু হয় আপিল বিভাগে আসা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে পঞ্চম আপিলের শুনানি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড রায়ের বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল আবেদনটি আপিল বিভাগে পঞ্চম আপিল মামলা।

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীন ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর এ আপিল দায়ের করেন।এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। তবে আপিলে আসামিপক্ষের শুনানির বিপরিতে রায় বহাল রাখার পক্ষে আর্জি পেশ করে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাকা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন।

এর মধ্যে ৩,৫,৬ ও ৮ নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে মৃত্যুদন্ড. ২,৪ ও ৭নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে ২০ বছর করে জেল এবং ১৭ ও ১৮ নং অভিযোগে তাকে ৫ বছর করে জেল দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল-১। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। সাকা চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে হরতালে গাড়ী পোড়ানো ও ভাংচুরের এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি