v

দৈনিকবার্তা-চরফ্যাশন, ১ জুলাই: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহাম্মদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সভাপতি আ.রহিম ও সাধারণ সম্পাদক আ.হাই ও কুচিয়া মোরা- ২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তাহির হোসেন সহ ১০ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহাম্মদ ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে অস্তিত্বহীন ২২টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসাসহ ৪৫টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা উপবৃত্তি প্রকল্পের অর্šÍভুক্ত করেন। নতুন জাতীয় করণকৃত ১৯২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গত জানুয়ারী -মার্চ/১৪ তিন মাসের উপবৃত্তি কর্তন করে ৩৯ টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার উপবৃত্তি বাড়ান। এভাবে তিনি প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া অস্তিত্বহীন ১৭ টি মাদ্রাসার ছয় মাসের ভূয়া উপবৃত্তি বিল পাশ করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

উপবৃত্তির মধ্যবর্তী সুবিদাভোগী নির্বাচনের সময় ২১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্কুল প্রতি ২শ’ টাকা করে এবং ইবেতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো থেকে ৬৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষক জাতীয় করণে স্কুল প্রতি ১৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পর্যায়ে প্রস্তাবিত জাতীয় করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। শিক্ষক বদলিতে নিয়ম না মেনে তিনি মনগড়া শিক্ষক বদলি করেন এবং বদলিকৃত শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ করেন ।

চলতি অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতে ৮৪ হাজার ৪০০টাকা করে ১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্ধ পায়। বরাদ্ধ প্রাপ্ত বিদ্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। ক্ষুদ্র মেরামত ও নিট বেইজ’র তালিকা প্রেরণের আগেই যেখানে মেরামতের প্রয়োজন নেই সেখান থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে তালিকা প্রেরণ করেন এমন ৩০টি স্কুল থেকে ঘুষ নিয়েছেন। নতুন ভবনের তালিকা প্রেরণে স্কুল প্রধানের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন । ২০১৫ অর্থবছরের ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ প্রাপ্ত ১৮৯ স্কুলের স্লিপের ভাউচার গ্রহণকালে স্কুল প্রতি এক হাজার টাকা করে ঘুষ নেন।প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় নিম্ম মানের খাতা সরবরাহ করে তিনি সাড়ে তিন লাখ টাকা বাণিজ্য করেন এবং পরীক্ষার সময়ে যাতায়াতের ৭৬ হাজার টাকা, নাস্তার ৩৬ হাজার টাকা খরচ না করে আত্মসাৎ করেন।

প্রাথমিক স্কুলের ১ম, ২য় সাময়িক ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন উপজেলায় তৈরী ও মর্ডারেশন করার নিয়ম থাকলেও শিক্ষা অফিসার বরিশাল থেকে নিম্ম মানের ভূলে ভরা প্রশ্ন কেজি হিসেবে ক্রয় করে এনে এখানে পরীক্ষা নেন। এতে প্রতি পরীক্ষায় তিনি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় করেন। দ্বীপ শিখা নামের সাজেশন গাইড শিক্ষকদের কাছে বাধ্যতা মুলক বিক্রি করেন। ওই সিলেবাসের মুল্য ২০ টাকা হলেও তিনি বিক্রি করেন ৫০ টাকা করে। স্কুলের পিয়ন নিয়োগ পত্র দেয়ার সময় জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া যে স্থানে দুই থেকে তিনটি প্রাথমিক স্কুল ভবন রয়েছে সেখান থেকে একটি ভবন প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে কমিটির মাধ্যমে রেজুলেশনের মাধ্যমে ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের সুবিদা গ্রহণ করে ভেঙে ফেলেন এভাবে প্রায় ৩৫ টি স্কুল ভবন ভেঙে ফেলেছেন।

শিক্ষা অফিসার দাপ্তরিক কাজ না করে বিভিন্ন পরীক্ষা ডিউটিসহ অন্য কাজে ব্যাস্ত থাকেন। এতে দাপ্তরিক কাজ ব্যহত হচ্ছে। অপরদিকে ৪/৫ জন শিক্ষক স্কুলে না গিয়ে তার সাথে দালালী কাজে ব্যস্ত থাকেন।এদিকে এবতেদায়ী মাদ্রাসার উপবৃত্তি প্রকল্পের ১২টি মাদ্রাসার পরিদর্শন করে উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান পেয়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের ফেরতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ইরতিজা আহম্মদ চৌধুরী।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই জানান, শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা শিক্ষা মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহম্মদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসংগে বলেন, অভিযোগ গুলো মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য মুলক ভাবে অভিযোগ গুলো দায়ের করেছে। এর কোন সত্যতা নাই।ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার খলিলুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে। প্রমানিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.রেজাউল করিম বলেন, অভিযোগের প্রমান পেলে যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।