দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ জুন: গণতন্ত্রহীন দেশ চলছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার বলে কিছু নেই। কেউ সত্য কথা বললে, এই সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনা করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’’ প্রশাসনের দলীয়করণের কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এছাড়া বতর্মান জাতীয় সংসদকে ‘গান-বাজনা’র সংসদ বলে অভিহিত করেছেন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার ইফতার পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে নবম সংসদের বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আজ জাতীয় সংসদে কোনো আলোচনা হয় না। এটা গান-বাজনার আসর হয়ে গেছে। সংসদে এখন কোরাম হয়না। বিরোধী দল বলে সেখানে কিছু নেই।’’‘‘ এই সংসদে বির্তক করার কোনো এ্যাজেন্ডা খাকে না। এর মধ্য দিয়ে সংসদ সম্পূর্ণভাবে অকাযর্কর হয়ে গেছে।’’এ থেকে উত্তরণে সব দলের অংশগ্রহনমূলক নিবার্চনের প্রয়োজন দাবি করে তিনি বলেন,‘‘ সেই নিবার্চন একটি নিরপেক্ষ নিবার্চন হতে হবে যাতে কোন রকম কারচুপি ও বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।’’
মঙ্গলবার ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে ইফতারে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারর্পাসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এই ইফতারের আয়োজন করেন।
বর্তমান নিবার্চন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ এই নিবার্চন কমিশনের কাছ থেকে ভালো নিবার্চন আশা করা যায় না। এটা একটা অপদার্থ ও অকাযর্কর নিবার্চন কমিশন। প্রধান নিবার্চন কমিশনার সত্য কথা বলার সাহস রাখেন না।’’তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘‘ জাতিকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করেই আওয়ামী লীগে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তদের দীর্ঘদিন রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে নানাভাবে।’’‘‘ এজন্য দেশের মানুষকে আজ সচেতন হতে হবে। তারা যদি দেশকে ভালোবাসেন নিজেকে ভালোবাসেন সবোর্পরি পরিবারকে ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধের সন্মান করেন, তাহলে তাদের আজ জেগে উঠতে হবে। অন্যায়-অত্যাচার-জুলুমবাজ অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।’’ দেশকে রাহুমুক্ত করতে রোজায় সকলকে আল্লাহর কাছে দোয়ার করার আহবানও জানান বেগম জিয়া।
তিনি বলেন, ‘‘ প্রশাসনের ভালো ভালো কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে দলীয় লোকজনকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনেও একই অবস্থা। সেখানে এতো দুরাবস্থা যা বলা কঠিন। সেখানে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি-অত্যাচার-নিপীড়ন চলছে। সব পুলিশই এর সঙ্গে জড়িত নয়।’’ ‘‘ কিছু কিছু আছে যারা এই সরকারের অতিরিক্ত প্রশ্রয় পেয়ে সব কিছু ছাড়িয়ে গেছে।তারা আইনেরও ধার ধারে না, কিংবা বিচারেরও তারা পরোয়ানা করে না।তারা বিচারের উধের্ব –এমন একটা হাব-ভাব হয়ে গেছে। যখন ইচ্ছা তখন মানুষ ধরছে, চাঁদা নিচ্ছে, চাঁদা চাইছে, খুন করছে, গুম করছে মানুষকে। প্রতিবাদ করার কিছু নেই।’’
সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ প্রতিনিয়ত দেশের সীমান্তে খুন হচ্ছে গুম হচ্ছে। ছোট বাচ্চা পযর্ন্ত খুন হচ্ছে। প্রতিবাদ করার কেউ নেই। আমাদের যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আছে, তারা আর সীমান্ত রক্ষী নেই। তাদের কোনো অবস্থান আদৌ আছে কিনা জানি না।’’‘‘ বর্তমান সীমান্ত রক্ষী বাহিনী শুধু নিজের দেশের মানুষের ওপর গুলি চালাতে পারে। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি তারা এদেশের জনগনের ওপরই ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্য কিছুই করা হচ্ছে না।’’
সম্প্রতি টেকনাফের কাছে সমুদ্র সীমানা থেকে মিয়ামার সীমান্ত রক্ষী(বিজিপি) বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজেবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে অপহরণের ঘটনার প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, ‘‘ বর্তমান সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মিয়ানমারের সঙ্গে পারে না। এখন তাদের(বিজেবি) ধরে নিয়ে যায়। কী অসন্মান করে। দেশের সন্মান আর কোথায় রইল। সরকার এই বাহিনীকে শেষ করে দিয়েছে। আগে আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আগে কিরকম চৌকশ ছিলো।’’দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য সরকারকে দায়ী করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক টেবিলে ইফতার করেন মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অন্যদের মধ্যে এলডিপির অলি আহমেদ, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আমীনুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামা ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি।
এছাড়া বিএনপির আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মসিউর রহমান, আসাদুজ্জামান রিপন, নিতাই রায় চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৈমুর আলম খন্দকার, আবেদ রাজা, গফুর ভুঁইয়া, এবিএম আশরাফউদ্দিন নিজান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শিরিন সুলতানা, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ২০ দলীয় জোটের রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, খন্দকার লুৎফর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাহাদাত হোসেন সেলিম, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, শামীম বিন সাঈদী, প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন, লোকমান হাকিম, ইমদাদুল হক, ফারুক রহমান, মাহমুদ খান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সদরুল আমিন, সুকোমল বড়ুয়া, সাবেক সচিব জাফর আহমেদ চৌধুরী ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।