দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ জুন ২০১৫: ব্রাজিল থেকে চারশ কোটি টাকার আমদানি করা গম আদৌ মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না,সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে আদালত৷ খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘন্টার মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে জানাতে হবে৷একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চে মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়৷বিষয়টি আগামী ৫ জুলাই আবার আদালতের কার্যতালিকায় আসবে৷আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন৷ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস৷শুনানি শেষে সাংবাদিকদের তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি না, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আদালত তা জানতে চেয়েছেন৷ গবেষণাগারে এ সংক্রান্ত সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে৷ আগামী ৫ জুলাই বিষয়টি আবার আদালতের কার্যতালিকায় আসবে৷
ওই গম আমদানি নিয়ে বিভিন্ন সাংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী রোববার এই রিট আবেদন করেন৷ সমপ্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ৪০০ কোটি টাকার দুই লাখ টন ‘নষ্ট ও পচা গম’ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর লুকোচুরি করছে৷ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি৷পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর ( টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷পচা গম আমদানির অভিযোগ ওঠার পর খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি ওঠে৷তবে ওই গম পচা নয় দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে বলেছেন, এ গম সম্পূর্ণ খাবার উপযোগী৷ খাদ্য অধিদপ্তর ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ গমের মান নিয়ে আমি স্যাটিসফায়েড৷
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে অভিযোগ ওঠার মুখে রোববার (২৮ জুন) তদন্ত চেয়ে রিট করেন আইনজীবী পাভেল মিয়া৷আগামী ৫ জুলাই আবেদনটি আবার হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসবে৷রিটে বিবাদী করা হয়েছে, খাদ্য সচিব, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে৷ রিট আবেদনে গম নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়৷পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে খাদ্য অধিদফতর থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল৷ ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো বিভাগ এর মান নিয়ে কোনো সনদ দেয়নি৷ বন্দরে অবস্থানকারী খাদ্য অধিদফতরের রসায়নবিদেরা এই গমের বেশ কয়েকটি চালানকে বি ক্যাটাগরির বা মাঝারি থেকে নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন৷
এসব জেনেও খাদ্য অধিদফতরের তত্কালীন মহাপরিচালক সারোয়ার খান চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ওই গমের ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন৷ অধিদফতরের আমদানি সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত, চিঠি ও পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে৷এই গম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশন হিসেবে সরবরাহের পর এর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ পুলিশের সব বিভাগীয় কার্যালয় এই গমকে নিম্নমানের এবং খাওয়ার অযোগ্য হিসেবে বর্ণনা করে একাধিকবার চিঠি দেয়৷ তার পরও খাদ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বারবার বলছে, এই গম অখাদ্য নয়৷ খাদ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যেও তাই বলেছেন৷ গত বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একই কথা বলেছে৷ব্রাজিল থেকে গম নিয়ে এমভি স্যাম উলভ নামের একটি জাহাজ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে এলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী অনুমতিপত্র ও নথি দেখতে চায়৷ তত্কালীন মহাপরিচালক ওই গম খালাসের জন্য অনুমতি দিতে বললে খাদ্য অধিদফতরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক লিখিতভাবে বলেন, ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় ও বণিক সমিতি রফতানিকৃত গমের নিশ্চয়তাপত্র দেয় না৷ তাই এই গম খালাস করার সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি৷