khaleda-zia_146498

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জুন ২০১৫: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বাদীর সাক্ষ্য বাতিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।খালেদার পক্ষে আদালতে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রাগীব রউফ চৌধুরী ও মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।আদেশের পর মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচারিক আদালতের আদেশে হাই কোর্ট অবৈধ কিছু পাননি। আমরা অবশ্যই আপিল করব।খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে জবানবন্দি যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, খালেদা জিয়া এ মামলায় বাদীকে জেরা করার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন।বিচারিক আদালতে আইন অনুসারে এ মামলা চলবে জানিয়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, এ ধরনের আবেদন করার আইনগত এখতিয়ার নেই বলেই হাই কোর্ট তা খারিজ করেছে।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এ মামলার অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত বছর ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার শুরু হয়।

বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও জামিনে থাকা খালেদা নির্ধারিত দিনে আদালতে না আসায় পাঁচ দিন তার অনুপস্থিতিতেই বাদীর সাক্ষ্য শোনে আদালত। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই খালেদার উপস্থিতিতে শুনানির পর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ২৩ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন রাখেন।এদিকে মামলার প্রথম সাক্ষী হিসাবে দুদক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা বাতিল ও নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে গত ১৫ জুন হাই কোর্টে ফৌজদারি রিভিশন’ আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয় গত সপ্তাহে।এ বিষয়ে তিন দিন দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে হাই কোর্ট সোমবার আবেদনটি খারিজের আদেশ দিল।

এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তার বৈধতা ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তবে তার আবেদনগুলো আপিলেও খারিজ হয়ে যায়।বিচারিক আদালতে পাঁচ কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাদী ও প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্য বাতিল করে নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে গত ১৫ জুন এ ফৌজদারি আবেদনটি জানান খালেদার আইনজীবীরা। পাশাপাশি ওই সাক্ষ্য কেন বাতিল করা হবে না, সেই রুল চাওয়া হয়েছে। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিতেরও আরজি জানান তারা। আবেদনে সরকার ও দুদককে বিবাদী করা হয়।গত ২৫ মে খালেদার আইনজীবীরা মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অররশিদের সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে আবেদন জানালে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার তা খারিজ করে দিয়ে পরবর্তী সাক্ষ্যের দিন ধার্য করেন। এ খারিজাদেশের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেন আসামিপক্ষ।এদিকে বিচারিক আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও প্রথম সাক্ষী হিসেবে গত ২৫ মে পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী হারুন-অর রশিদ। দুই মামলায়ই তাকে আংশিক জেরা করেছেন আসামিপক্ষ। আগামী ২৩ জুলাই দুই দুর্নীতি মামলায় প্রথম সাক্ষীর বাকি জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট আসামি ছয়জন। অপর পাঁচজন হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, খালেদা জিয়ার শাসন আমলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।অপরদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি চারজন। অপর তিনজন হলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সচিব ও বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন ও মোট সোয়া ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ও ২০১১ সালের ৮ আগস্ট মামলা করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়। অন্যদিকে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়।তদন্ত শেষে মামলা দু’টির চার্জশিট দেওয়া হয়। অভিযোগ গঠনের আগেও মামলা দু’টি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। আবেদন দু’টি খারিজ করেন হাইকোর্ট।গত বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায়।

এ অভিযোগ গঠন বিধিসম্মত হয়নি দাবি করে হাইকোর্টে আরও একটি আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। শুনানি শেষে এ আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।এরপর মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে এবং বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবারও রিট করেন খালেদা জিয়া। শুনানি শেষে গত বছরের ২৫ মে বিভক্ত রায় দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি এক আদেশে তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করে দিলে গত বছরের ১৯ জুন ওই রিট দু’টিও খারিজ করেন।এদিকে আগের বিচারকের প্রতিও অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো ছাড়াও তার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এজলাসকক্ষেই বিশৃঙ্খলা ও হই-হট্টগোল এবং বিচারকের প্রতি কটূক্তি করে আসছিলেন খালেদার আইনজীবীরা।এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে ও প্রধান বিচারপতির পরামর্শে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আবু আহমেদ জমাদারকে।নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ১০ দিন।দীর্ঘদিন ধরে শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন বিচারিক আদালত। পরে গত ৫এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়াসহ ওই তিন আসামি ।