দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ জুন: প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একে যুগান্তকারী ও উন্নয়নধর্মী উল্লেখ করে বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে অঙ্গীকার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। রোববার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপনের পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।গত ৪ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিকে একটি যুগান্তকারী ও উন্নয়নধর্মী বাজেট প্রদানের জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা দু’টি অঙ্গীকার করেছিলেন একটি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, ঘোষিত রূপকল্প-২০২১-এর আলোকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিংয়ের ফলে পবিত্র রমজান মাসেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির তিন বছরের জন্য এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট পলিসি ঘোষণা করা হবে এবং ফটকা কারবারী বন্ধ, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত পরামর্শক কমিটির পরামর্শের আলোকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ রফতানিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশী পণ্য ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি এক্সেস পেয়েছে। পণ্য বাজার বহুমুখীকরণ ও সম্প্রসারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্বদা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বহু দেশ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার দিয়েছে।
তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সাথে বহুদিনের সমস্যা ¯’লসীমান্ত চুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় কতগুলো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত সংশোধিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এই চুক্তির ফলে কোন দেশের পণ্য অপর দেশের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় কোন দেশে পরিবহনের সুযোগ হবে। বাংলাদেশ এ বছর ডব্লিউটিও’তে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব লাভ করেছে। এর ফলে ডব্লিউটিওতে বাংলাদেশের যে অধিকার তা আদায়ে আমরা সক্ষম হবো বলে আশা করি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভালভাবে গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর ও বিভাগ ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক রফতানিতে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ইস্যুবিহীন আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের ফলে পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোশাক খাত মালিকদের দক্ষতার ফলে পোশাক রফতানির চেইন নষ্ট হতে দেয়া হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউরো’র ডিবুলিউশনের কারণে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পরে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ফলে আমরা সেই সমস্যার সমাধানে আমরা সক্ষম হয়েছি। আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে রানা প্লাজাই একমাত্র ঘটনা নয়, বাংলাদেশে অনেক উন্নতশীল ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। তিনি পোশাক শিল্পে আরোপিত ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ সেটা সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেন। যে সেক্টর থেকে ৮১ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, সেই সেক্টরের প্রতি সহনশীল হওয়া প্রয়োজন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার অর্জন করা হতো। কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে তখন ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার তারা রফতানি করেছে। গত ৬ বছরে তা ৩ গুণ বৃদ্ধি করে এবারের টার্গেট ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ৯২ দিনের ধ্বংসযজ্ঞে তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এর ফলে হয়তো ৩৩ বিলিয়ন ডলার অর্জন করা সম্ভব না হলেও এর কাছাকাছি পৌঁছা সম্ভব হবে। ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনের টার্গেট গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সার শিল্পের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা সার রফতানি করতে পারবো বলে আশা করছি। বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক বিশ্বে মর্যাদা লাভ করেছে। স্বাধীনতার পর মাথাপিছু আয় ছিল ৫০ থেকে ৭০ ডলার। এখন আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। ডিপিপি’র মাধ্যমে মূল্যায়ন করলে বা ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করলে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার ডলার। মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হতে যে যে উপাদানগুলো প্রয়োজন বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হবে।মন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ছিল ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ওই সময় রিজার্ভ ছিলই না, সেটা এখন ২৫ বিলিয়নের বেশি। যেখানে রেমিটেন্স ছিলই না সেটা এখন ১৫ বিলিয়নের বেশি। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে।