দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ জুন: সরকারের নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছু নেই বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। রোববার এক ইফতার মাহফিলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ দেশে আজ গণতন্ত্র নিবার্সিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষ আজ প্রতিনিয়ত গুম-খুন-হত্যা-নিযার্তনের শিকার হচ্ছে। এজন্য দায়ী বর্তমান জবর দখলকারী এই সরকার।’’

‘‘ তারা (সরকার) কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছু নেই।’’সকল অপকর্মের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জড়িত অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘ তাই আগামী সকল পেশার মানুষ ও দেশবাসীর কাছে একটাই আমাদের আহবান থাকবে, আসুন এই রমজান মাসে প্রতিটি নামাজে আল্লাহ কাছে দোয়া করব, ফরিয়াদ করব যাতে তিনি (আল্লাহতালা) এই জালেমদের দ্রুত বিদায় করেন। জনগনের মাধ্যমেই গণঅভুত্থানে এই স্বৈরাচার বিদায় হবে। দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশে শান্তি ও সন্মান ফিরে আসবে।’’

47892_000000

ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লা্ব মিলনায়তনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন-ড্যাব এর উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এতে বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-স্যার সলিমুল্লাহ-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম-বগুড়াসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক, চিকিৎসক এবং তিন হাজার চিকিৎসক অংশ নেন।

যানজটের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন ইফতারের শুরুর মিনিট খানেক পর অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। এরপরপরই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ফলে ইফতার শেষে বেগম জিয়া চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। প্রবীন চিকিৎসক বি চৌধুরী, রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এমএ মাজেদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের রুহুল আমিন গাজী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের শওকত মাহমুদ, ড্যাব এর সভাপতি অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এছাড়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বায়েস ভুঁইয়া, অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, ইউনিভার্সিটি টিচার অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, সাংবাদিক নেতা এম আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান আসাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমূখ ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।

দখলবাজ ও চাঁদাবাজীর জন্য ক্ষমতাসীনদের অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ সরকারের এমপি ও তার পরিবার এমনকি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সর্বস্তরের  নেতা-কর্মীরা মানুষের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করছে। তাদের চাঁদাবাজীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতিতে জনগনের নাভিশ্বাস উঠেছে।’’‘‘ সাধারণ মানুষ আজ কীভাবে রোজা রাখে সেদিকে অবৈধ সরকারের কোনো নজর নেই্। তারা বড় বড় মিথ্যা বুলি আওড়ায়। আর বড় বড় প্রকল্পের নামে সব টাকা কমিশন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’’

প্রশাসন ও বিচারবিভাগে দলীয়করণের অভিযোগও করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।তিনি বলেন, ‘‘  ভালো ভালো চিকিৎসক যারা জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক তাদের চাকুরি থাকে না। বিচার বিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। সেখানেও বিচারক পদে দলীয় লোকজন বসানো হয়েছে। ফলে বিচারকরা সাধারণ মানুষকে ন্যায় বিচার দিতে পারছেন না। মানুষ সুবিচার পাচ্ছে না।’’‘‘ সরকারি দলের লোকজন খুন-খারাবি যাই করুক কেনো, তাদের কোনো বিচার নেই, তাদের ধরা হয়
না, শাস্তি হয় না।’’পুলিশ বাহিনীর দলীয়করণের কথা বলতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ কিছু কিছু পুলিশ সদস্য আছেন যারা চরম অত্যাচার ও চরম দুর্নীতির সঙ্গে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। আজকে পুলিশ মানুষ গুম করে তাদের কাছেই টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদেরকে হয় ক্রস ফায়ারে দেবে না হলে জেলে নিয়ে যাবে। এ হচ্ছে পুলিশের অবস্থা।’’‘‘ আজ পুলিশ আর সেবক নয়। তাদের হাত অনেক লম্বা হয়েছে। আগে আমরা শুনতাম, আইনের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু এখন পুলিশের হাত অনেক বেশি লম্বা হয়েছে। কারণ তারা বলে এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে।’’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো চরম অস্থিরতার জন্য ক্ষমতাসীনদের অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘ আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোতে শুধু অরাজগতা, বিশৃঙ্খলা ও মারামারি। কয়েকদিন আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই কারবার শুরু হয়েছে।’’‘‘ কাজে বিচার বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে আজ দেশ আর দেশ নেই্।যে দেশের জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিলো, স্বাধীনতা আনলো। সেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আজ অর্থহীন হয়ে গেছে।’’

খালেদা জিয়া বলেন,‘‘ আমরা দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন চাই। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মেয়েরা যাতে নির্ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে, সকল জনগনের নিরাপত্তা বিধান করতে চাই। ইনশাল্লাহ আমরা তা পারব।’’ইফতার শুরুর আগে অনুষ্ঠানস্থলে টেবিলে টেবিলে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।ইফতারে ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আবদুল হালিম, আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপর, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আনহ আখতার হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।