দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ জুন ২০১৫ : বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্টে বিএনপি উল্লসিত নয় বরং দুঃখিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আন্তর্জতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদ্জ্জুামান রিপন।শনিবার দুপুরে রাজধানী নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।রিপন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই রির্পোটকে আমরা সাধুবাদ জানাই না। কারণ প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সম্মানজনক নয়। এছাড়া প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সার্বিক চিত্রও ফুটে উঠেনি। কারণ বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবচিত্র আরো ভয়াবহ, জটিল ও কঠিন।তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা-এমপিরা যে কথা বলেন এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরো হুমকির সম্মুখীন হবে। কারণ বর্তমান সংসদে ১৫৪ জন ফাউ এমপি ও কিছু লাফাঙ্গা মার্কা মন্ত্রী আছে। এই মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য ফাউ কথাগুলো বলেন। ফলে এদের জন্য সরকার ও বাংলাদেশ উভয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে খুচরা পার্টির নেতা বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, শুক্রবার খুচরা পার্টির নেতা ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়ার জায়গা হবে কাশিমপুর কারাগারে। আমরা জানি না, তিনি কবে বিচারক হলেন। আমরা বলছি না,ইনুর জায়গা হবে কুষ্টিয়া কারাগারে। কারণ আমরা বিচারক নই। বাংলাদেশের বোমাবাজি, সন্ত্রাসের জনক হচ্ছেন ইনুরা। তারই এদেশে হত্যা-সন্ত্রাসের অপরাজনীতি শুরু করেছিলেন। এই ইনুরাই শেখ মুজিবের শাসনকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ঝালাপালা করে দিয়েছিল।ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর থেকে দেয়া প্রতিবেদনের থেকেও বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। ওই রিপোর্ট বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই নেতিবাচক।তিনি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরির বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানিবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তাতে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।দেশের জরুরী অবস্থা নেই,তারপরও গণমাধ্যমকর্মীরা নিজ থেকেই অনেক কিছু সেন্সর করেন। মিডিয়া যখন ভয়ভীতির মাধ্যমে কাজ করে তখন তা প্রকৃত গণমাধ্যম হতে পারে না।
রিপন বলেন, বর্তমানে যে সংসদ বহাল আছে তার মধ্যে ১৫৪ জন ফাও এমপি আছে। বাকি যারা আছে তাদেও কেউই ৫ ভাগের ও কম ভোট পেয়ে সংসদে গিয়েছেন।সে কারণে এসব ভোটার বিহীন এমপিরা নির্বাচনের কথা শুনলেই আতকে ওঠে। এই সংসদে কিছু লাফাঙ্গামার্কা এমপি আছে। যখন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভবনা দেখা দেয়, তখন সেই লাফাঙ্গা-বাচাল মার্কা এমপিরা আরোল তাবোল বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করে থাকে।ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ইনুরাই শেখ মুজিবের শাসনকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে ঝালাপালা করে দিয়েছিল। যার কারণে দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি করলেও শেখ মুজিব একদলীয় বাকশাল শাসনের কলঙ্গ গায়ে মাখাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ৭৫ এর পর ইনুরাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সে অপরাধে সে গ্রেফতারও হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তিনি আজও বেঁচে আছেন, রাজনীতি করছেন, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার সুযোগ পাচ্ছেন। তা হলে তার ফাঁসির কাষ্টে ঝোলার কথা।”
তিনি বলেন,মূলত নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই খুচরা পার্টির নেতারা নানারকম উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশের রাজনীতিকে উত্তপ্ত করতে চায়। বিএনপি বিশেষ করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্পর্কে নানা ধরনের আবোল তাবোল উত্তেজিত কথা বলে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে চায়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এসব খুচরা নেতাদের বক্তব্যে সায় দেবেন না।ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, তিনি বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদক্ষেপ নেবেন। বিএনপিও এই খুচরা পার্টির নেতাদের আবোল তাবোল-উস্কানিমূলক বক্তব্যে উত্তেজিত হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেবে না।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জায়গা হবে কাশিমপুর কারাগারে- তথ্য মন্ত্রী হাসানুল ইনুর এই বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জানতাম ইনু একজন ভোটারবিহীন মন্ত্রী ও এমপি। কিন্ত তিনি কবে বিচারকের জায়গায় বসলেন। তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি তাহলে তলে তলে নিজেরাই বিচারের রায় দেন?এই বিষয়ে তিনি আরো বলেন, হাসানুল হক ইনু হচ্ছেন বোমাবাজি ও নৈরাজ্যকর রাজনীতির উদ্যোক্তা। সরকার এই বিষয়টি জেনেও কিছু বলছে না। কারন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করে চলেন।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য হেলেন জেরিন খান, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মি আক্তারসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।