দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ জুন: টানা চারদিনের ভারি বর্ষণে কয়েক চট্রগ্রাম,কক্সবাজার, বান্দরবান, রাজশাহী, খুলনা ,সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমি ও চিংড়িঘের। বানের পানিতে ভেসে গেছে গৃহপালিত পশুসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। এদিকে, কক্সবাজার ,নোয়াখালী ও খুলনাতে মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত অব্যাহত আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। চলছে বৃষ্টির মৌসুম আষাঢ়।
আর আষাঢ়ের জানান দিতে বেশ উদার হয়ে উঠেছে আকাশ। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে চলছে টানা বর্ষণ। আর আষাঢ়ের এমন বৃষ্টিতে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের জনজীবন। গত দুইদিন ধরে অনেকটা গ্রামীণ জীবনের পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানী জুড়ে।অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে যে বৃষ্টিপাত দেখা দিয়েছে তা রোববার সকালের আগে কমার তেমন সম্ভাবনা নেই। রোববার সকালে থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে। তবে এরপরও দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত হতে পারে।সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পুরুষরা কাজ তেমন না থাকলে ঘর থেকে খুব একটা বের হচ্ছেন না। অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় পার করছেন খোশগল্পো করে।
সিংহভাগ মেসেই(ব্যাচেলার ভাড়াটিয়া) অধিকাংশ সময় ধরে চলছে তাস অথবা দাবা খেলার আসর। ব্যস্ত নগরীর সবাই যেনো বাধ্য হয়ে ভুলে গেছে ব্যস্ততাকে। গ্রামীণ জীবনের মতো অলস সময় পার করতেই ব্যস্ত সবাই! রোজার কারণে অধিকাংশ গৃহিনীরও কাটছে অলস সময়। অবশ্য অনেকে অলস সময় কাটাতে সুই-সুতা নিয়েও বসে পড়েছেন। কেউ মেশিনের সাহায্যে চালাচ্ছেন বিভিন্ন সেলাইয়ের কাজ। আবার কেউ হাতের নিপুণ কারুকাজে সুই-সুতার মাধ্যমে মনের মাধুরী মিশিয়ে পোশাকের উপর ফুটিয়ে তুলছেন বাহারি ডিজাইন। যা এদেশের গ্রামীণ নারীর চিরন্তর প্রতীক।
অলস সময় কাটাচ্ছেন বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েরাও। বৃষ্টির কারণে স্কুল, কোচিং, প্রইভেট পড়া বন্ধ থাকায় নেই পড়ার চাপ, নেই বাবা-মায়ের শাসন। পাশের বাসার বন্ধু অথবা বান্ধবীর সঙ্গে লুডু, দড়ি খেলে অথবা খুনসুটিতে মেতে থেকে সময় চলে যাচ্ছে অনেকের। কেউবা ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে রঙ পেনসিলে মনের আনন্দে আঁকছেন ঘর-বাড়ি, পশু-পাখি, মানুষসহ নানা ছবি।তবে বৃষ্টির পানিতে রাস্তায় উপর দুরন্তপনায় মেতে থাকা ছেলে-মেয়েদের দৃশ্যও কম দেখা যাচ্ছে না। প্রতিটি মহলার গলিতেই দলবেঁধে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের দৌঁড়াদৌঁড়ি, রাস্তার পানিতে গড়াগড়ি করতে দেখা গেছে।
মাঝে মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন কিশোর-কিশোরীরাও। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অধিকাংশ অঞ্চলের মহল্লার রাস্তাগুলোতে পানি জমে গেছে। ফলে অতি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষগুলোকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। কোন কোন অঞ্চলে প্রধান সড়কেও পানি জমে গেছে।শনিবার সকাল থেকে রাজধানী ঘুরে রামপুরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, দয়াগঞ্জ, ধলপুর, খিলগাঁও, বাসাবো, কমলাপুর, মানিকনগর, মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, শান্তিনগর, বাড্ডাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পুরানপাড়া গ্রামে পাহাড় ধসে মা-মেয়ে মারা গেছে। শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পুরানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী সমুদা খাতুন (৪৫) ও তাঁর মেয়ে সোহেনা আক্তার (১৫)।বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোকতার আহমদ বলেন, ভোরে পাহাড় ধসে আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী ও মেয়ে মারা গেছে। ওই সময় বাড়ির গৃহকর্তা আবুল মঞ্জুর নামাজ পড়তে পার্শ্ববর্তী মসজিদে থাকায় তিনি রক্ষা পান। ৩০০ ফুট দূরের পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ায় তাঁর বাড়িটি মাটি চাপা পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আধা ঘণ্টা চেষ্টার পর লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন বলেন, নিহত মা ও মেয়ের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
লামা প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামায় টানা ৪ দিনে বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ধীরগতিতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় সরকারি হিসেবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৭ হাজার ৭শ’ ২০ পরিবার সম্পূর্ণ এবং ৬ হাজার ৫শ’৪০ পরিবারের বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে লামা পৌরসভা এলাকা।
গত রোববার রাত থেকে প্রবল বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লামা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এসময় লামা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা ৭ থেকে ১০ ফুট পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়। প্লাবিত এলাকার বন্যা দূর্গত লোকজন ১৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্রে অবস্থান করে। অপরদিকে, প্রবল বর্ষনের কারনে উপজেলার আজিজনগর, ফাইতং, রুপসী পাড়া, ফাসিয়াখালী ও লামা পৌরসভা এলাকায় পাহাড় ধসে বহু কাচা ঘরবাড়ি বিধস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যপক ফলদ ও বনজ বাগান। সরই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম জানান, প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে পড়ে গয়ালমারা গ্রামের ৪টি বসতঘর সম্পূর্ণ ও ৭টি বসতঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে আন্দারী এলাকার একটি স্কুলে আশ্রয়ন নিয়েছে। ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, চার দিনে বর্ষনের ফলে পাহাড় ধসে ও পাহাড়ি ঢলে ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। লামা বাজার ব্যবসায়ী জাপান বড়–য়া জানান, গভীর রাতে দ্রুত ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দোকানের বেশিরভাগ মালামাল নিরাপদে সরানো সম্ভব হয়নি। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল পনিতে ডুবে নষ্ট হয়। স্থানীয়রা জানান, থেমে থেকে বর্ষণের ফলে উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক হারে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তরা কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।
এদিকে, দূর্যোগ মোকাবেলায় শুক্রবার বিকালে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সদ্য যোগদানকৃত নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধূরী, লামা পৌরসভা মেয়র মো. আমির হোসেন, বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামমুন নাহার সুমি, উপজেলা সহকারি ভূমি কমিশনার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ প্রাকৃতিক এ দূর্যোগ মোকাবেলায় দল মত নির্বিশেষে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
লামা উপজেলা প্রকল্প বচাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ও পাহাড় ধসে লামা উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় সর্বমোট ৭ হাজার ৭শ’ ২০ পরিবার সম্পূর্ণ এবং ৬ হাজার ৫শ’৪০ পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রী বিতরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নোয়াখালী ২৭জুন ,ফোকাস বাংলা নিউজ :নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের শূন্যেরচর এলাকার সূর্যমূখি ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে মাছ ধরার ট্রলার ডুবে তিন জেলে নিহত হয়েছে। ঘটনায় আরো সাত জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার ভোরে মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন- উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের রেহেনিয়া এলাকার আনাজল হকের ছেলে জামাল ছেরাং (৪৫), একই এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল মতিন (২৫) ও শূন্যেরচর এলাকার রাশেদের ছেলে রাকিব হোসেন (১৭)। উদ্ধারকৃতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোর ৪টার দিকে সফিউল আলম ডিলার’এর একটি মাছ ধরার ট্রেম্পু ট্রলার নিয়ে শূন্যেরচর এলাকার সূর্যমূখি ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায় ১০জন জেলে। এসময় বৃষ্টি ও জোয়ারের কবলে পড়ে ট্রলারটি মেঘনায় ডুবে যায়। এতে ট্রলারে থাকা ১০ জেলে নিখোঁজ হয়।পরে পাশে থাকা অন্য জেলেরা এগিয়ে গিয়ে ৭জনকে জীবিত উদ্ধার করলেও তিন জেলে নিখোঁজ থাকে। সকালে নিখোঁজ তিন জেলের মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল হুদা ট্রলার ডুবে তিন জেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাঙামাটি: গত কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণের কারণে পার্বত্য জেলা শহর রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাংকিং করা হয়েছে।পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে শনিবার (২৭ জুন) টানা তিন দিনের মতো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানিয়ে শহরে মাইকিং করা হয়।এদিকে, দুপুরে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার ও উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. তৈয়বের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত শিমুলতলী পাহাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় তারা এ এলাকা ত্যাগ করে বাসিন্দাদের স্থানীয় ভেদভেদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানান।অন্যদিকে, জেলার সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে কয়েক দফা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সভায় সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার জানান, দুর্যোগকালীন সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপদকালীন তহবিল হিসাবে ৮০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকার তহবিল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম: টানা চারদিনের ভারি বর্ষণের পর শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। তবে পাহাড়ি ঢলের কারণে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।শুক্রবার রাতে জেলার চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া সীমান্তে শঙ্খ নদীর আশপাশের প্রায় সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কমপক্ষে ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শঙ্খ নদীতে পাহাড়ি ঢলের কারণে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এজন্য নদীপড়ের সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া যেসব এলাকা পানিবন্দি আছে সেগুলোর পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।পানিবন্দি লক্ষ লক্ষ মানুষকে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসন ৫০ টন চাল এবং আট লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এসব বরাদ্দ সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান এবং বাঁশখালীতে বন্টন করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।তিনি বলেন, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ এবং রাউজানে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এজন্য সেখানে বরাদ্দগুলো পাঠানো হয়েছে। কাল (রোববার) আরও কিছু বরাদ্দ পাব। সেগুলো অন্যান্য উপজেলায় পাঠানো হবে।চারটি উপজেলার বাইরে আরও আটটি উপজেলায় একটি-দু’টি করে গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।এছাড়া বানের পানিতে ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমি ও চিংড়িঘের, গৃহপালিত পশুসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তলিয়ে গেছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।এদিকে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কেও যানবাহন চলছে সীমিতভাবে। বান্দরবানে গিয়ে চট্টগ্রামের অনেকে সেখানে আটকা পড়েছেন। কক্সবাজারেও আটকে আছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাজালিয়া, পূর্ব বাজালিয়া, বড় দুয়ারা, ঘিলাতলী, মাহালিয়া এলাকা পানিতে ডুবে আছে। এখানে পাহাড়ি ঢল ও শঙ্খ নদীর পানিতে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের উপর পানি বয়ে যাচ্ছে। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকার লোকজন বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।এছাড়া চরতি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম পানির নিচে ডুবে আছে। এসব এলাকার সড়কগুলোও পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। নলুয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রাম ও আমিলাইশ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের লোকজনও পানিবন্দী রয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ ও সদরের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার সড়ক ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল, বাহারছড়া, চাম্বল, গন্ডামারা, খানখানাবাদ এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের বেড়িবাঁধও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর, জুইদণ্ডী, বরুমচড়া এলাকায়ও পানি উঠেছে।
তবে শঙ্খ নদী ও উপকূলীয় এলাকার লোকজন বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বলে জানা গেছে।চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের চাগাচর দিয়াকুল, নয়াপাড়া, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া ও বৈলতলী ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে ডুবে গেছে। শঙ্খ নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ও পাহাড়ি ঢলে এসব এলাকায় পানি বাড়ছে বলে জানা গেছে। নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে শঙ্খপাড়ের লোকজন।
পটিয়া উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের জুলধা, ডাঙ্গারচর ও বড় উঠান ইউনিয়নের বড় উঠান, দৌলতপুর ও শাহমীরপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।হাটহাজারী উপজেলার ফরহদাবাদ, ধলই, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দন, মেখল, শিকারপুর ও আলমপুর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।সামগ্রিক পরিস্থিতিতে রোববার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
বৈঠকে চট্টগ্রামের সব উপজেলা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।এদিকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর।পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সঙ্গে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।চট্টগ্রামে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে টানা চারদিন ধরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দর জেটিতে পণ্য ওঠা-নামার কাজ চলছে।প্রবল বর্ষণে সাগর উত্তাল থাকায় গত বুধবার থেকে বহিনোঙ্গরে অবস্থান করা জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না। এর আগে সোমবার থেকে পণ্য খালাসে বিঘ্ন ঘটে।বন্দর সূত্র জানায়, বহিনোঙ্গরে অবস্থা করা ১৩টি জাহাজে প্রায় ৮ লাখ টন পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ডাল, গম, সয়াবিন, লবণ, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য রয়েছে।ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদবলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত সোমবার কেউ লাইটার জাহাজ ভাড়া নেয়নি।মঙ্গলবার একটি ভাড়া নিয়েছেন। বুধবার থেকে (শনিবার পর্যন্ত কোন জাহাজ ভাড়া নেয়নি। এখনো বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
খুলনা: টানা বর্ষণে খুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনের ছাদ ধসে আবিদা আরিফিন শাপলা (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্রী নিহত হয়েছে।শনিবার (২৭ জুন) সকাল ১০টার দিকে নগরীর আহসান আহমেদ রোডের একটি দ্বিতল ভবনের মাঝ বরাবর ধসলে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিহত আবিদা আরিফিন শাপলা ওই এলাকার ইমামুল হাকিম টিটোর মেয়ে।প্রতিবেশিরা জানান, সে ও তার পরিবারের সদস্যরা নগরীর ৫১ আহসান আহমেদ রোডস্থ নিজ বাসভবনে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ সকালে দ্বিতল ভবনের মাঝ বরাবর ধসে ঘুমন্ত শাপলার ওপর পড়ে। এতে সে মারাত্মক আহত হয়।তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা ইমামুল হাকিম টিটো জানান, একই সময় পাশের কক্ষে ছোট ছেলে ফয়সালসহ অন্যরা থাকলেও তারা অক্ষত রয়েছে।এদিকে, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ভবনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের কাজ শুরু করেছেন।ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মাসুদ সরদার বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পুরনো এ ভবনটির ভিত নড়বড়ে হওয়ায় ছাদের একাংশ ধসে পড়ে।খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, নিহত শাপলা নগরীর সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
ফেনী: ফেনীর ফুলগাজীতে অনুমোদন ছাড়া ৫৩ লাখ টাকার কাজ করতে গিয়ে ভাঙ্গনের হুমকিতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ। ভাঙ্গন আতংকে নিঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকাবাসী।সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের দক্ষিন বরইয়া গ্রামের ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১১ লাখ টাকার কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কাসেম ট্টেডার্স। কার্য্যাদেশ মেয়াদ শেষ হলোও ৫ মাসে কাজ শেষ হয়নি। পাশেই ৫৩ লাখ টাকার কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই শুরু করেন। বেড়িবাধের ধারে বাঁশঝাড়, গাছপালা কেটে ফেলা হয় ব্লক বসানোর জন্য।
গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে মুহুরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানটি ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আমান আলী, রফিকুল ইসলাম, হরলাল মাস্টার, সিবু রাম ধর ও রতন ধর জানান, আমরা আতঙ্কে নিঘুম রাত কাটাচ্ছি। আমাদের বাড়ি ঘর, মৎস খামার, পশু পাখি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছিনা। গত শুক্রবার সকালে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী ও তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ক্ষতিগ্রস্থ স্থান পরিদর্শন করেছেন।
এই ব্যাপারে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কে.এম আনোয়ার হোসেন জানান, ৫৩ লাখ টাকার কাজের অনুমোদন এখনো হয়নি। কাগজপত্র মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে প্রায় ১৫ দিন হল। অনুমোদন আসলে কাজ আরম্ভ হবে। অনুমোদন ছাড়া কাজ কিভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে, তিনি জানান এটা নির্বাহী প্রকৌশলী জানেন।এই ব্যাপারে ফেনী পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলীর কে মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কুড়িগ্রাম :উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টি হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার ৭২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ চরাঞ্চলের মানুষ আবারো পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। জেলার অধিকাংশ চরাঞ্চলের মানুষজনের খড়া বন্যা অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি আর প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্য দিয়ে বেচে আছে। প্রতিবছর দুধকুমর, গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর কড়ালগ্রাসে বিলীন হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার একর ফসলী জমি ও ফসল ।
নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা স্বজনরা পরিবার পরিজন মানবেতর জীবন যাপন করে। তাদের পুর্নবাসনের জন্যসুইচগেট ও আবাসনের দাবী জনিয়েছে সরকারে নিকট।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,টানা বৃষ্টিতে নদ-নদী, খাল-বিলে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে পাটক্ষেত বীজতলা এবং চরাঞ্চলগুলো মানুষ জলাবদ্ধতায় অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে ও নদী ভাঙ্গনে আবাদী অনাবাদী জমি ঘরবাড়ী গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনের আশংখায় বাড়ীঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে কুড়িগ্রামের যাত্রাপুরের তীরবর্তী মানুষজন।
ভিটেমাটি ছাড়া যার কোন জমি নেই তারা আশ্রয়হীন হয়ে মানবেতর দিন যাপন করছে। বৃষ্টির পানিতে ইতমধ্যে ২য় দফায় আবারো নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জেলা সদরের যাত্রাপুর,পাঁচগাছি.নাগেশ্বরীর বিষ্ণুপুর, চরলুছনী, ফান্দেরচর, শৌলমারী, ধনীরামপুর, জালিরচর, ব্যাপারীরচর, চরকাপনা, চেীদ্দঘুড়ি, চরদামালগ্রাম, চর নুনখাওয়া, বল্লভেরখাস, পদ্মারচর, মৌলভীরচর, খেয়ারচর, খেলারভিটা, ইন্দ্রগড়, চরমাঝিয়ালি, পাখিউড়া, পাঁচমাথা, মুড়িয়া, ঝুনকারচর, সতিপুর, ভাটিয়ারচর, পাখিউড়া, চরনারায়নপুর, চরবেরুবাড়ী, হেলোডাঙ্গা, ধাউরারকুটি, কাজিয়ারচর, চরউত্তরতিলাই, উত্তর ধলডাঙ্গা, শালঝোড়, দক্ষিন ধলডাঙ্গা তলিয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় মানুষ নিদারুন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। চর লুছনীর কৃষক আ: মোবারক বলেন, প্রতিবারের ন্যায় দফায় দফায় বৃষ্টি ও বন্যার পানির কারণে আমরা জমিতে ফসল ফলাতে পারি না। উলিপুরের মন্ডলের হাটের কৃষক হাসেম মোল্লা,মজিবর,জয়নাল বলেন,হেন্দলির দোলার সাথে ধরলা নদীর সম্পর্ক রয়েছে তাই একটু পানি বৃদ্ধি হলে দোলায় পানি ঢোকে।
আর বার বার ফসল বোনালে বার বার খেয়ে জায়। একটি সুইচগেট হলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে ফসল ফলানো যেত। যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আঃ গফুর ও পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আমির হেসেন জানান, যাত্রাপুর ও পাচঁগাছি ইউনিয়ন দুটি নদী কেন্দ্রিক হওয়ায় তাদের ইউনিয়নে অসংখ্যা মানুষ পানি বন্দি ও ভাঙ্গনের শিকার হন। এদের পুর্ন বাসনের জন্য যে আবাসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা প্রযোজনের তুলনায় সামান্য। পাাঁচগাছী ও যাত্রাপুরে আরো ১টি করে আবাসন দেয়া জরুরী বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর দাবী।
ভোলা: বৈরী আবহাওয়ার কারণে সপ্তম দিনের মতো বন্ধ রয়েছে ভোলার অভ্যন্তরীণ ১০ রুটে ৬৫ ফুটের নিচে সব ধরণের নৌযান চলাচল।নদী বন্দরগুলোতে ২নং সতর্ক সংকেত জারি থাকায় বিআইডব্লিটিএ এসব রুটে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৬৫ ফুটের নিচে এমএল ও এমভি টাইপের সব ধরণের অনিরাপদ লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।নৌযান চলাচল বন্ধ থাকা রুটগুলো হলো, ভেলুমিয়া-ধূলিয়া, নাজিরপুর-কালাইয়া, ইলিশা-মজু চৌধূরীরহাট, তজুমদ্দির-মনপুরা,বেতুয়া-মনপুরা,মনপুরা-কলাতলীরচর,তুলাতলী-নোয়াখালী, মির্জাকালু-আলেকজেন্ডার, ভেদুরিয়া-লাহারহাট ও বোরহানউদ্দিন-বরিশাল।ভোলা বিআইডব্লিটিএর পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. নাসিম এ বিষয়ে বলেন, আগামী রোববার পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।এদিকে, এসব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় এ রুটের হাজার হাজার যাত্রী চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। কেউ কেউ আবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল মেঘনায় ঝূঁকি নিয়ে পারাপার করছে।
অন্যদিকে, টানা পঞ্চম দিনের মতো ভোলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া। এছাড়া ভারী বর্ষণ ও লঘু চাপের প্রভাবে সৃষ্ট নি¤œচাপে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার।জোয়ারের পানিতে ভোলা-লক্ষীপুর রুটের ইলিশা ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা বিঘ্নিত হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর: কয়েক দিনের টানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপকূলীয় প্রায় দুই হাজার পরিবার।অবিরাম বর্ষণে রামগতি কমলনগর রায়পুর রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এছাড়াও আউশের মাঠ ডুবে গেছে ও মৌসুমী সবজির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারের পানিতে রামগতি উপজেলা মেঘনা উপকূলীয় সেবাগ্রাম চর আবদুল্লাহ, চরগজারিয়া, তেলিরচর ও সেবাগ্রাম।কমলনগর উপজেলার চরফলকন, সাহেবেরহাট, পাটোয়ারীরহাট, চর কালকিনিসহ মেঘনা উপকূলীয় এলাকা ও চরাঞ্চাল প্লাবিত হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতে ওইসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। বেশ কয়েকটি পরিবার পাকা রাস্তার ওপর ঝুঁপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে, রায়পুরের দেনায়েরপুর, মধুপুর, চরআবাবিল, কেরোয়া, বামানী, চরপাতা, রামগঞ্জ উপজেলার, ইছাপুর, চণ্ডিপুর, নোয়াগাঁ, কাঞ্চপুর, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হামছাদি, দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, মাহাদেবপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে মাছ চাষিরা।রামগতি উপজেলার তেলিরচর এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে পারিনি। এলাকাতে কাজ নেই। নদীতে মাছে নেই, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।
চরফলকন এলাকার বাসিন্দা এমডি ছানা উল্যাহ জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে তার বাড়িতে এখন হাটু পানি। বসতঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে।স্থানীয় সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাস্টার আবুল খায়ের জানান, মেঘনা উপকূলে বেড়িবাঁধ নেই। যে কারণে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নিচু এলাকা ডুবে গেছে। মেঘনা নদীর ভাঙনও বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্লাবিত হওয়া এলাকার লোকজন চরম হতাশায় ভুগছেন।কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইব্রাহীম হামিদ শাহিন বলেন, প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যেতে পারে। তবে, এ ব্যাপারে কেউ জানায়নি। তবুও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।এদিকে, সিরাজগঞ্জ ,বগুড়া ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।