High_Court_Khaleda-290x160

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ জুন: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদীর সাক্ষ্য বাতিল ও পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর আদেশের দিন ২৯ জুন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হয়।খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব উদ্দিন খোকন।দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী রাগিব রউফ চৌধুরী জানান, গত ২৫ মে বিচারিক আদালত এই মামলার বাদীর সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দেন। পরে এ বিষয়ে তাঁরা হাইকোর্টে যান।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এ মামলার অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত বছর ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার শুরু হয়।বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও জামিনে থাকা খালেদা নির্ধারিত দিনে আদালতে না আসায় পাঁচ দিন তার অনুপস্থিতিতেই বাদীর সাক্ষ্য শোনে আদালত। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই খালেদার উপস্থিতিতে শুনানির পর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ২৩ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন রাখেন।এদিকে মামলার প্রথম সাক্ষী হিসাবে দুদক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা বাতিল ও নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে গত ১৫ জুন হাই কোর্টে ফৌজদারি রিভিশন’ আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয় গত সোমবার।খালেদার আইনজীবীরা বলছেন,কোনো ফৌজদারি মামলার আইন অনুযায়ী আসামির উপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্য নিতে হয়, তা না হলে অনুমতি নিয়ে আইনজীবীর উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নিতে হয়। কিন্তু এ মামলায় তা করা হয়নি।

আইনজীবীরা আদালতে বলেন, পাঁচটি তারিখে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৫ মে সাক্ষ্য না নেওয়ার আবেদন জানানো হলে আদালত তা খারিজ করে দেয়।এই কারণ দেখিয়ে রিভিশন আবেদনে বাদীর সাক্ষ্য বাতিল করে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আবার সাক্ষ্য নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন তারা।পাশাপাশি ওই সাক্ষ্য কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে রুল এবং তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আরজিও খালেদার আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন।এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তার বৈধতা ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তবে তার আবেদনগুলো আপিলেও খারিজ হয়ে যায়।গত ১৫ জুন সাক্ষ্য বাতিল করে নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে এ ফৌজদারি আবেদনটি জানান খালেদার আইনজীবীরা। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার কার্যদিবসে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মাহবুবউদ্দিন খোকন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।গত ২৫ মে খালেদার আইনজীবীরা মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে আবেদন জানালে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার তা খারিজ করে দিয়ে পরবর্তী সাক্ষ্যের দিন ধার্য করেন। এ খারিজাদেশের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেন আসামিপক্ষ।খালেদার আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, বিচারিক আদালতে পাঁচটি কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাদী ও প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। যেকোনো ফৌজদারি মামলার আইন অনুযায়ী আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নিতে হয়। তা না হলে অনুমতি নিয়ে আইনজীবীর উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নিতে হয়। এক্ষেত্রে তা হয়নি, যা বেআইনি। এ কারণেই আবেদনে বাদীর সাক্ষ্য বাতিল করে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আবার সাক্ষ্য নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ওই সাক্ষ্য কেন বাতিল করা হবে না, সেই রুল চাওয়া হয়েছে। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিগেরও আরজি জানিয়েছেন তারা। আবেদনে সরকার ও দুদককে বিবাদী করা হয়েছে।এদিকে বিচারিক আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও প্রথম সাক্ষী হিসেবে গত ২৫ মে পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী হারুন-অর রশিদ। দুই মামলায়ই তাকে আংশিক জেরা করেছেন আসামিপক্ষ। আগামী ২৩ জুলাই দুই দুর্নীতি মামলায় প্রথম সাক্ষীর বাকি জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ মোট আসামি ছয়জন। অপর পাঁচজন হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, খালেদা জিয়ার শাসন আমলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।

অপরদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি চারজন। অপর তিনজন হলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সচিব ও বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন ও মোট সোয়া ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ও ২০১১ সালের ৮ আগস্ট মামলা করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়। অন্যদিকে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়।