দৈনিকবার্তা-লক্ষ্মীপুর, ২৪ জুন: লক্ষ্মীপুরে চলতি বর্ষা মৌসুমে শসা সবজি’র বাম্পার ফলন হয়েছে। উন্নত জাতের শসার চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। পবিত্র রমজান উপলক্ষে চাহিদা বৃদ্ধি ও ভাল দাম পাওয়ায় চাষীদের মুখে ফুটে উঠেছে সজীব হাসি। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ টন নির্ধারন করা হলেও তার চেয়ে বেশী উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মিয়ার বেড়ি, ছুটকির সাঁকো, চর ভূতা, পেয়ারাপুর, চর মনসা, চর রমনী ও ভবানীগঞ্জ এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ শসা ক্ষেতে ছেয়ে আছে। ফসলের মাঠে সারি সারি শোভা পাচ্ছে অজ¯্র শসা। ক্ষেত পরিচর্যা ও শসা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার চাষীরা। জেলার কৃষকরা হাইব্রিড জাতের শসার বীজ বোপনের পর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল পেতে শুরু করে। এ জাতের শসা গাছে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এবং দেশি জাতের শসা আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। অপেক্ষাকৃত দেশি জাতের ফলের ধরণ কম।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ফল তোলা যায়। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের শসা ফলন বেশি কিন্তু মাত্র ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত ফল দেয়। তবে এসব এলাকায় হাইব্রিড জাতের শসার বেশি চাষ হয়ে থাকে। দামের দিক দিয়ে দেশি ও হাইব্রীড শসার এক হলেও দেশী জাতের শসা ওজনে কম লাগে। জেলার শসা প্রতি মণ সাধারনত ৪-৫’শ পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে তবে রমজানে এর চাহিদা বেশি থাকায় প্রতি মণ শসা ১১’শ থেকে ১৩’শ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। এতে বেশ লাভবান হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় সাধারণত শীত ও গ্রীষ্মকালীন এ দু’মৌসুমে শসা’র আবাদ হয়। কিন্তু চলতি এ গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে রমজান মাসকে প্রাধান্য দিয়েই শসার আবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৮শত একর জমিতে শসা সবজির চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শসা আবাদ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে মিয়ারবেড়ীঁ এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, শসা চাষে যদি কোন কৃষি অফিসারের পরামর্শ পেতাম তাহলে আমরা আরো ভালো ফলন ফলাতে পারতাম এবং অনেক বেশি লাভবান হতাম। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের ছুটকির সাঁকো এলাকার শসা চাষী মিজান জানান, তিনি ৭২ শতাংশ জমিতে শসা আবাদ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজানের দুই দিন আগে তিনি বিক্রি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে পাইকারদের কাছে প্রতিমন শসা ১৩’শ টাকা করে প্রায় পঁচিশ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। স্থানীয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা শসা কিনতে আসছেন। গতবারের চেয়ে এবছর দাম বেশ ভালো। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে রমজানে তিনি দেড়-দুই লাখ টাকার শসা বিক্রী করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরভূতা এলাকার শসা চাষী ইসমাইল জানান, আমার প্রায় আড়াই একর জমিতে শসার আবাদ করেছি। বাম্পার ফলনও হয়েছে। রমজানের প্রথম দিন থেকে শসা বাজারজাত শুরু করেছি। এতে আমার খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করি। তিনি আরো জানান, স্থানীয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর পাইকাররা শসা কিনতে আসেন। এবছর রমজান উপলক্ষে দামও বেশ ভালো পাচ্ছি। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় এবার ৫০৫ হেক্টর জমিতে শ’সার আবাদ হয়েছে। সময় মতো ভালো বীজ ও ক্ষেতে সুষম সার ব্যবহার করায় বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে রমজান উপলক্ষে শসার ভালো দাম পাওয়া কৃষকরা বেজায় খুশি। আগামীতে শসার আরো চাষ হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।