দৈনিকবার্তা-সংসদ ভবন, ২৪ জুন, ২০১৫ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য ফরহাদ হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে খুবই ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরস্পরের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকারের জায়গাগুলো বুঝেছি। দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে ছিল নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আন্তঃসংযোগ ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীসমূহের পানি বণ্টন ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে ‘এক্সচেঞ্জ অব ইনস্ট্রুমেন্টস অব রেটিফিকেশন অব ১৯৭৪ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট এন্ড ইটস ২০১১ প্রটোকল’, ‘এক্সচেঞ্জ অব লেটারস অন মডালিটিজ ফর ইমপ্লেমেন্টেশন অব ১৯৭৪ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট এন্ড ইটস ২০১১ প্রটোকল’, ‘বাইলেটারেল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (রিনিউয়াল), ‘এগ্রিমেন্ট অন কোস্টাল শিপিং বিটুইন বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া’, ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড (রিনিউয়াল)’, ‘বাইলেটারেল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এন্ড ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) অন কো-অপারেশন ইন দি ফিল্ড অব স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন’, ‘এগ্রিমেন্ট অন ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস এন্ড ইটস প্রটোকল’, ‘এগ্রিমেন্ট অন কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস এন্ড ইটস প্রটোকল’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন প্রিভেনশন অব হিউম্যান ট্রাফিকিং’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন প্রিভেনশন অব স্মাগলিং এন্ড সার্কুলেশন অব ফেক কারেন্সি নোটস’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া এন্ড ফর এক্সটেনডিং এ নিউ লাইন অব ক্রেডিট (এলওই) অব ইউএস ডলার ২ বিলিয়ন বাই গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া টু গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন ব্লু ইকোনোমি এন্ড মেরিটাইম কো-অপারেশন ইন দি বে অব বেঙ্গল এন্ড দি ইন্ডিয়ান ওসেন’ ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন ইউজ অব চিটাগং এন্ড মংলা পোর্টস’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং ফর এ প্রজেক্ট আন্ডার আইইসিসি (ইন্ডিয়ান এনডোমেন্ট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ) অব সার্ক’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক জোন’, ‘কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ফর ২০১৫-১৭’, ‘স্টেটমেন্ট অব ইনটেন্ট অন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া এডুকেশন কো-অপারেশন (এডপটেশন)’, ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ সাবম্যারিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এন্ড ভারত সঞ্চার নিগাম লিমিটেড (বিএসএনএল) ফল লিজিং অব ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইডথ অব ইন্টারনেট আখাউড়া’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বাংলাদেশ এন্ড কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, ইন্ডিয়া অব জয়েন্ট রিসার্চ অন ওসেনোগ্রাফি অব দি বে অব বেঙ্গল’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন ইউনিভার্সিটি অব রাজশাহী, বাংলাদেশ এন্ড ইউনিভার্সিটি অব জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ইন্ডিয়া’ এবং ‘হ্যান্ডিং ওভার অব কনসেন্ট লেটার বাই ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ), বাংলাদেশ টু লাইফ ইন্স্যুরেন্স কো-অপারেশন (এলআইসি), ইন্ডিয়া টু স্টার্ট কো-অপারেশনস ইন বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, স্থল সীমানা চুক্তি ১৯৭৪ ও এর ২০১১ এর প্রটোকলটি অনুসমর্থনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের সীমানা নির্ধারণী বহুমুখী সমস্যার এবং ছিটমহলবাসীর মানবিক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালের ২৫ মে ভারতের পক্ষে সে দেশের রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি এবং ২০১৫ সালের ৫ জুন আমি বাংলাদেশের পক্ষে এ সংক্রান্ত ‘ইনস্ট্রুমেন্টস অব রেটিফিকেশন’ স্বাক্ষর করি। আমরা চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেগুলো ঠিক করেছি এবং দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোদি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টির মানবিক দিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। একে রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি শিগগিরই সম্পাদনের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে আরো বিদ্যুৎ রপ্তানিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দু’দেশের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
তিনি বলেন, সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি উভয়েই এ বিষয়ে সম্মত হয়েছি যে, আন্তঃসংযোগ শুধু এ দু’দেশের নয়, এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রটোকলের স্বাক্ষর এবং এর সাথে সাথে নতুন বাস সার্ভিস চালু এ অঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, চুক্তিগুলোতে বাণিজ্য সহজীকরণের যে বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে, তার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ সবই এদেশের তথা এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের দ’ুদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর সরকারের সার্বিক সহায়তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দু’দেশের মান নির্ধারণী সংস্থাদ্বয়ের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যার মাধ্যমে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সমতা আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ শুধু ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। আমরা আশা করছি, এর ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় নতুন নমনীয় ঋণের সদ্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের যোগাযোগ অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারবো। সমুদ্র ভিত্তিক ব্লু ইকোনমি ও ম্যারিটাইম সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারকটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আমি আশাবাদী। একে অপরের দেশে নতুন কূটনৈতিক মিশন খোলার মাধ্যমে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূরদর্শনের মাধ্যমে ভারতে বিটিবির অনুষ্ঠান প্রচারে ভারতের সম্মতি প্রাপ্ত হওয়ায় বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল ভারতে দেখা না যাওয়ায় যে অভিযোগ তারও অনেকাংশে লাঘব হতে পারে।