দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ জুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অবৈধ মানব পাচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে৷তিনি বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য শরীফ আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন,অবৈধভাবে মানবপাচারের বিষয়টি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনের লক্ষ্যে সরকার গত ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন প্রণয়ন করেছে৷ মানব পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাসত্মি হিসেবে মৃতু্যদন্ড ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷তিনি বলেন, মানব পাচার একটি আনত্মর্জাতিক সমস্যা এবং মানব পাচারকারীরা আনত্মর্জাতিক চক্রের সাথে জড়িত৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো উন্নত ও আধুনিক ট্রেনিং প্রদান, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তথ্য আদান-প্রদান এবং সর্বমহলের সহযোগিতার মাধ্যমে মানব পাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ২০১২-২০১৪ প্রণীত ও বাসত্মবায়িত হয়েছে৷ এছাড়া মানব পাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫-২০১৭ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা শিগগির প্রকাশিত হবে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ সংক্রানত্ম কমিটির সভা প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হয়৷ মানব পাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার সংক্রানত্ম বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার বিষয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়৷ মানব পাচারকারীদের বিরম্নদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷তিনি বলেন, সমপ্রতি বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোস্ট গার্ডের বর্তমান সময়ের কার্যক্রম আরো বিসত্মৃত হয়েছে৷ সমুদ্র পথে মানব পাচার রোধে কোস্ট গার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে৷শেখ হাসিনা বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে বর্তমান কোস্ট গার্ডের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ১টি পেট্রোল ক্রাফট এবং ১টি অত্যাধুনিক হাই স্পিড মেটাল শার্ক বোট সার্বক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম ও গহিরা অঞ্চলে টহল নিয়োজিত রয়েছে৷ টহল কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য ১টি করে হাই স্পিড মেটাল শার্ক বোট কুতুবদিয়া এবং সাঙ্গু স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে৷ এছাড়া শাহপুরী, টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন্স উপকূলীয় অঞ্চলে ২টি অত্যাধুনিক হাই স্পিড মেটাল শার্ক বোট দ্বারা টহল প্রদান করা হচ্ছে৷ তাছাড়া কঙ্বাজার, ইনানী ও মহেশখালী উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় কাঠের বোট দ্বারা টহল প্রদান করা হচ্ছে৷
তিনি বলেন, মানব পাচার বিষয়ক তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে৷ তাছাড়া দ্রুত ও নিশ্চিত অভিযান পরিচালনার জন্য উলি্লখিত অঞ্চলসমূহে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ মানব পাচার রোধে নদী ও সমুদ্র পথে এবং দালাল চক্র আটক করতে চট্টগ্রামের সমুদ্র তীরবতর্ী এলাকাসমূহে কোস্ট গার্ড নিয়মিত ফুট পেট্রোল পরিচালনা করছে৷কোস্ট গার্ড সমুদ্র পথে অবৈধভাবে বিদেশ গমনকালে এ পর্যনত্ম সর্বমোট ১ হাজার ৭৩৬ জন বিদেশগামী নাগরিককে সাগর থেকে আটক করেছে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানব পাচারের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কোস্ট গার্ড তার অধীনস্থ অধিক্ষেত্রসমূহের এলাকায় নিয়মিত প্রচারণা এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনামূলক তথ্য সধারণ জনগণের মাঝে প্রচার করছে৷ সীমানত্ম এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে মানব পাচার রোধে আইন প্রণয়ন, অবকাঠামো বিনির্মাণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমানত্মে সর্বোচ্চ নজরদারি জারি রয়েছে৷
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যনত্ম অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ২৫৫ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করে পরবতর্ী আইন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হসত্মানত্মর করা হয়েছে৷ পাশাপাশি দালাল চক্রকে গ্রেফতারের নিমিত্তে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ মানব পাচারসহ অন্যান্য আনত্মঃসীমানত্ম অপরাধ প্রতিরোধে সীমানত্মে ৫৯৯টি বিওপি সক্রিয় রয়েছে৷ এছাড়া বিওপিসমূহের মধ্যবতর্ী স্থানে ১২৪টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট তৈরি করা হয়েছে এবং আরো ১২৫টি বিএসপি তৈরির কাজ চলমান রয়েছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, মানব পাচার রোধে পুলিশ কর্তৃক গোয়েন্দা তত্পরতা জোরদার করা হয়েছে এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল ডিউটি বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ মানব পাচার অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে৷ মানব পাচারে মামলাগুলো তদনত্ম ও অপরাধীদের গ্রেফতার কার্যক্রম মনিটরি করার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে একটি বিশেষ সেল কাজ করছে৷ মানব পাচারকারীদের অর্থের লেনদেন বন্ধ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের উপর নজরদারি করার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে৷তিনি বলেন, পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এ মানব পাচার সংক্রানত্ম মামলা ও অপরাধীদের সম্পর্কে বিসত্মারিত তথ্য ইনপুট দেয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে সারাদেশের পুলিশ ইউনিটগুলোর মধ্যে দ্রম্নত মানব পাচার সংক্রানত্ম তথ্যাদি আদান প্রদান সহজতর হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পাচারকৃত বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রম্নত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং মানব পাচার রোধে এতদাঞ্চলের দেশসমূহ যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে এ জন্য সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার যে কোন সহিংস ঘটনা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর৷তিনি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পূর্ববতর্ী সময়ে এবং বিগত ৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাসেরও অধিককাল ধরে হরতাল, অবরোধ ও আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ নাশকতা চালিয়ে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করেছে৷শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যনত্ম ১২৮ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৭৩ জন আগুনে পোড়া৷ ১ হাজার ৩৯৫টি যানবাহন তারা পুড়িয়েছে৷ এছাড়া ৬টি লঞ্চ এবং ১৩টি ট্রেন সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ ইসু্যবিহীন আন্দোলন করে তারা শুধু দেশের সম্পদের ক্ষতিই করেনি তাদের এ সকল কর্মকান্ডে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রসত্ম হয়েছে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেকাংশে নিরম্নত্সাহিত হয়েছে৷ এ সকল নাশকতামূলক কর্মকান্ড ও অরাজকতার বিরম্নদ্ধে সারাদেশে বিপুলসংখ্যক মামলা হয়েছে৷
তিনি বলেন, এসব মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ ও ২৭ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজকে এসব আইনের অধীন আনীত অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার প্রদান করেছে৷ এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাসমূহের তদনত্ম কাজ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ঊধর্্বতন অফিসার কর্তৃক তদনত্ম কার্যক্রম মনিটরি করা হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে যে সব মামলা বিচারিক আদালতে গেছে সেগুলোতে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও প্রসিকিউশন সচেষ্ট রয়েছে৷ এছাড়া অতি গুরম্নত্বপূর্ণ মামলাসমূহের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মনিটরিং উপ-কমিটির সভায় আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারি থেকে হরতাল-অবরোধকালে পেট্রোল বোমায় নিহত ও আহতদের চিকিত্সা বাবদ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য মো. ইয়াসিন আলীর এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন৷
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হুকুমে এ বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে হরতাল ও অবরোধকালে পেট্রোল বোমায় নিহতদের স্বজন ও আহতদের চিকিত্সা ও পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে৷ এটা চলমান রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহত ৫ জন ও নিহত আরো ১৩ জনের ২৮ জন নিকট-স্বজনের অনুকূলে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার চেক প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে৷শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষতিগ্রসত্ম যানবাহনের মধ্যে এ পর্যনত্ম ৮৬০টি যানবাহনের বিপরীতে সংশিস্নষ্ট মালিকদের অনুকূলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে মোট ৯ কোটি ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার ১৪০ টাকা প্রদান করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, এছাড়া, ক্ষতিগ্রসত্ম আরো ২৮৫টি গাড়ির জন্য সংশ্লিষ্ট মালিকদের অনুকূলে ৭ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার চেক প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রোল বোমায় গুরুতর আহত ৪ জনকে (এসএসসি পরীক্ষাথর্ী অনিক ও হৃদয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল কাদের এবং ড্রাক ড্রাইভার লিটন মিয়া) উন্নত চিকিত্সার জন্য একাধিকবার বিদেশে পাঠানো হয়েছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সমুদয় চিকিত্সা-খরচ নির্বাহের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে৷ তাদের চিকিত্সা চলমান রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমানের ১৯৭৭ সালের ৩০ মে ভোটারবিহীন হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে দেশে প্রহসনমূলক নির্বাচনের শুরু৷তিনি বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে৷ হত্যা, কু্য ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ শুরু হয়৷ সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়৷ সংবিধান ও আর্মি অ্যাক্টের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে একাধারে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে৷ এই অবৈধ ক্ষমতা বৈধকরণের প্রাথমিক চেষ্টা হিসেবে প্রথমে হ্যা, না ভোটের আয়োজন করে৷ ১৯৭৭ সালের ৩০ মে দেশব্যাপী গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ গণভোটে প্রদত্ত আস্থা জ্ঞাপন ভোটের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭০ এবং অনাস্থা জ্ঞাপক ভোটের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৯৮৷ ভোটারবিহীন এ নির্বাচনকে দেশের প্রহসনমূলক নির্বাচনের শুরু হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়৷শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর হত্যাকারী জেনারেল জিয়া নিজ ক্ষমতাকে বৈধ করার অপপ্রয়াস হিসেবে এ ভোটের আয়োজন করে৷ দেশ গণতান্ত্রিক ধারা থেকে বিচু্যত হয়৷ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি৷
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচন পূর্ববতর্ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ কর্তৃক ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন ও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা হয়৷ নির্বাচন অফিসসহ নির্বাচনী মালামাল সংরক্ষণে ব্যবহৃত স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ কৌশলগত স্থান ও নির্বাচনী এলাকার প্রবেশ পথে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়৷ এছাড়া চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী, নির্বাচনে সম্ভাব্য বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ব্যক্তি, সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, জঙ্গী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করে যাতে নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৫ উপলক্ষে নির্বাচনকালীন সময়ে শানত্মি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ করা হয়৷ নির্বাচন এলাকাসমূহের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পুলিশ এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়৷তিনি বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র্যাব দায়িত্ব পালন করে৷ নির্বাচনী এলাকায় নির্ধারিত সময়ের জন্য এঙ্িিকউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়৷ তিন সিটি কর্পোরেশনের প্রবেশ পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেক পোস্ট স্থাপন করা হয়৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৫ উপলক্ষে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সার্বিকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শানত্মিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেনাবাহিনীকে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যবস্থখা গ্রহণের জন্য ক্যান্টনমেন্টে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল৷তিনি বলেন, তিন সিটি কর্পোরেশনের ১৩৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২ হাজার ৭০১টি ভোট কেন্দ্রের জন্য ৫২ হাজার ৩৪ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়৷ সকলের কাছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য দেশী-বিদেশী মোট ৩ হাজার ৮১৩ জন পর্যবেক্ষককে অনুমতি প্রদান করা হয়৷ নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনে ৪৫ জন নিজস্ব পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে৷শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে তাত্ক্ষণিকভাবে অপরাধ আমলে নেয়ার জন্য ৩৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়৷ অনুরূপভাবে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য ১০২ জন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য ৩৫৭ জন এঙ্িিকউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়৷ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শানত্মিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য ফরহাদ হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন৷শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে খুবই ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘আমরা পরস্পরের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকারের জায়গাগুলো বুঝেছি৷ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে ছিল নিরাপত্তা, সীমানত্ম ব্যবস্থাপনা, বিদু্যত্ ও জ্বালানি, আনত্মঃসংযোগ ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীসমূহের পানি বন্টন ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, আনত্মর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোদি অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের বিষয়টির মানবিক দিকে প্রাধান্য দিয়েছেন৷ একে রাজনীতির ঊধের্্ব স্থান দিয়েছেন ও তিসত্মার পানি বন্টন চুক্তি শিগগিরই সম্পাদনের আশ্বাস দিয়েছেন৷ তিনি সীমানত্ম হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে আরো বিদু্যত্ রপ্তানিসহ বিদু্যত্ ও জ্বালানি খাতে দু’দেশের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন৷তিনি বলেন, সীমানত্ম শানত্মিপূর্ণ রাখা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি৷ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি উভয়েই এ বিষয়ে সম্মত হয়েছি যে, আন্তঃসংযোগ শুধু এ দু’দেশের নয়, এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ৷ উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন, অভ্যনত্মরীণ নৌ-পরিবহন প্রটোকলের স্বাক্ষর এবং এর সাথে সাথে নতুন বাস সার্ভিস চালু এ অঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের দৃষ্টানত্ম৷ এর মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হবে৷
শেখ হাসিনা বলেন, চুক্তিগুলোতে বাণিজ্য সহজীকরণের যে বিষয়গুলো সনি্নবেশিত হয়েছে, তার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে৷ এ সবই এদেশের তথা এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের দ’ুদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর সরকারের সার্বিক সহায়তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন৷তিনি বলেন, দু-দেশের মান নির্ধারণী সংস্থাদ্বয়ের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যার মাধ্যমে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়৷ দু\’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সমতা আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ শুধু ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি৷ আমরা আশা করছি, এর ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে৷শেখ হাসিনা বলেন, ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় নতুন নমনীয় ঋণের সদ্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের যোগাযোগ অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিত্সা, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারবো৷ সমুদ্র ভিত্তিক ব্লু ইকোনমি ও ম্যারিটাইম সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারকটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আমি আশাবাদী৷ একে অপরের দেশে নতুন কূটনৈতিক মিশন খোলার মাধ্যমে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূরদর্শনের মাধ্যমে ভারতে বিটিবির অনুষ্ঠান প্রচারে ভারতের সম্মতি প্রাপ্ত হওয়ায় বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল ভারতে দেখা না যাওয়ায় যে অভিযোগ তারও অনেকাংশে লাঘব হতে পারে৷
