দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ২৪ জুন: সত্তর লাখ টাকার চেক প্রতারণার একটি মামলায় নারায়ণগঞ্জের নাগরিক আন্দোলন নেতা রফিউর রাব্বিকে এক বছরের কারাদণ্ড ও দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত।নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মামুন-উর রশিদ তিন বছর আগের এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রাব্বি এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদুর রউফ বলেন, আদালত যে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে, তার মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা মামলার বাদীকে, বাকি টাকা সরকারি কোষাকারে জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে রফিউর রাব্বির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠক রফিউর রাব্বি ২০১৩ সালে অপহরণকারীদের হাতে নিহত স্কুলছাত্র ত্বকীর বাবা। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাসীন দলের সংসদ শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে আসছিলেন রাব্বি। আর যে মামলায় রাব্বির সাজার আদেশ এসেছে, সেই মামলাটি ২০১২ সালে দায়ের করেছিলেন শহরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকার জালাল উদ্দিন, যিনি সম্পর্কে শামীম ওসমানের মামা শ্বশুর।
অ্যাডভোকেট আওলাদ তিনি বলেন, রফিউর রাব্বির কাছ থেকে তার ব্যবসায়িক অংশীদার শামীম কাদরি ৩০ শতাংশ জমি কেনেন। পরে শামীম কাদরীর কাছ থেকে ওই জমি কিনে নেন ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন।জালাল জমিটি নামজারি করতে গেলে দলিল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে তা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরপর নামজারি বাতিল হয়ে যায়।পরে বিষয়টি মিমাংসার জন্য এক বৈঠকে জমিটি রফিউর রাব্বিকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যার জন্য রাব্বি দাম বাবদে নেওয়া ৭০ লাখ টাকা জালাল উদ্দিনকে ফেরত দেবেন বলে ঠিক হয়।
বিবাদীর আইনজীবী বলছেন, ওই সময় জমি ফেরত দেওয়ার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত জালাল উদ্দিনের আইনজীবী মাসুদ-উর রউফের কাছে দুটি তারিখ বিহীন চেক জমা রাখেন রফিউর রাব্বি। কিন্তু জমি ফেরত না দেওয়ায় নগদ টাকা পরিশোধ করেননি রাব্বি, ওই চেকও ফেরত পাননি।এরপর আইনজীবী রউফের কাছে রাখা ওই চেক দুটিতে টাকার অংক বসিয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর তা প্রত্যাখাত হলে এ মামলা দায়ের করে বাদীপক্ষ, বলেন আওলাদ।অন্যদিকে বাদীর আইনজীবী মাসুদুর রউফ জানান, রফিউর রাব্বি ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ৭০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের আলাদা দুটি চেক জালাল উদ্দিনকে দেন। চেক দুটি এবি ব্যাংকে জমা দেওয়া হলে ওই ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা প্রত্যাখাত হয়।এরপর টাকা পরিশোধের জন্য রফিউর রাব্বিকে উকিল নোটিস পাঠান বাদী। তারপরও টাকা পরিশোধ না করায় ৭০ লাখ টাকার চেক প্রতারণার অভিযোগ এনে ওই বছর ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এ মামলা করেন জালাল।
মামলাটি পরে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যায়। সেই আদালতই বুধবার রায় ঘোষণা করে।রাব্বির মালিকাধীন পোশাক কারখানা সাইন নিটওয়্যার লিমিটেডের কাছে সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখায় সুদে-আসলে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ১০৪ টাকা পাওনা থাকায় তার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে।এ কারণে গত বছর নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের উপ নির্বাচনে রাব্বির মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন বাতিল করে দেয়।