দৈনিকবার্তা-কুড়িগ্রাম, ২৪ জুন: কুড়িগ্রামে পতিত জলাশয়ে মাছ চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে শতাধিক মৎস্যচাষী। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করে কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরির পাশাপাশি দূর করছে সংসারের অভাব। আর্থিক সুবিধা পেলে দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম জেলার মৎস্যচাষীরা। জেলার নাগেশ^রী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের জফরী পাড়ার একটি পতিত উম্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ করছে প্রায় শতাধিক মৎস্যচাষী। প্রতিবছর বর্ষা এলে কাজ থাকে না এখানকার কয়েক শ সাধারণ চাষীদের। তাই বছরের অর্ধেকটা সময় অভাবের তারণায় ভূগতে হয় এই চাষী পরিবারদের। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রাকের সহযোগিতায় ১৪ একর পতিত উম্মুক্ত জলাশয়ে ৭৭ জন বেকার চাষীদের নিয়ে মাছ চাষের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম,রংপুর,লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় ৭টি স্থানে ১শ ১একর পতিত জলাশয় ভূমিতে ১১ লাখ টাকার ১শ ৬০ মণ রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, কই, মাগুর ইত্যাদি দেশীয় প্রজাতি মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া হয়। এলাকার সাধারণ চাষী কফিল উদ্দিন,মজিবর রহমান জানান, প্রতি বোরো মৌসুম শেষে বর্ষার পানি জমে যাওয়ায় ৬ মাস পর্যন্ত বসে থেকে কোনো রকমে দিন কাটিয়ে দিতে হয় এখানকার চাষীদের। কাজের খোঁজে বের যেতে হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রাকের সার্বিক সহযোগিতায় এখন তারা ভাগ্যন্নোয়নে দেখছে নতুন সম্ভাবনা।সমির উদ্দিন ও সালমা বেগম বলেন, বাহে হামরা তো কোনো রকমে দিন আনি দিন খাই আর অভাবের সংসারত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা তো স্বপ্নের মতো। জলাশয়ে মাছ চাষের ফলে পরিবারে আমিষের অভাব দূর করার পাশাপাশি সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরার আশা জেগেছে সবার মাঝে। এছাড়াও কাজের সুযোগ তৈরিতে কমছে বেকারত্ব। কালিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, দুধকুমার নদের তীরবর্তি ঘেঁষে গড়ে ওঠা কালিগঞ্জ ইউনিয়ন। নদ-নদীর ভাঙ্গনের ফলে অভাব এই এলাকার পিছু ছাড়েনা। আর্থিক সংকটের কারণে এখানে অনেক জলাশয় পতিত রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে এলাকার দারিদ্রতা দূর করা সম্ভব।
ব্রাকের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক বাবুল নন্দন প্রামাণিক বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নতুন-নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে ৩ জেলার ৭টি স্থানে ৩শ ২৫জন বেকার চাষীদের নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ব্রাক যা আগামি ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলবে। প্রতিটি জলাশয়ে ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা এবং অভাবী মানুষের আমিষের পাশপাশি অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। নাগেশ^রী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরাফাত সিদ্দিক জানান,বর্তমান সরকার দেশকে মধ্যম আয়ে পরিণত করতে ২০২১ সালে ৪২ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা মাছ উৎপাদনের জন্য একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানকার মাটির উর্বরতা বেশি,পানি বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থে পরিমাণ উপযোগী পর্যায়ে রয়েছে। সেদিক থেকে জলাশয় গুলোর সঠিক পরিচর্যা আর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করা যায় তা হলে জেলার দারিদ্রতা হার কমে আসা পাশাপশি ভাগ্যয়ন্নোয়ন ঘটানো সম্ভব। তিনি আরো বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর চাষীদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষনের সাথে বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদি ঋণ সহায়তা প্রদান করছে।নাগেশ^রীরর কালিগঞ্জ ইউনিয়নের জফরী পাড়ায় গতকাল সকালে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য উম্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের দ্বারা স্বয়ংসম্পূর্ণতা