দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ২৪ জুন: পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও রাজশাহীর এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নেমেছে ভেজাল ও নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর কাজে। রোজার মাঝামাঝি সময় থেকেই খোলা লাচ্ছার চাহিদা বাড়তে থাকবে মুসলমানদের মাঝে। সেই চাহিদা পুরণ করতে এরই মধ্যে নগরী এবং নগরীর উপকন্ঠের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ৪০টির বেশি মৌসুমি কারখানা। সেইসঙ্গে রয়েছে আরো ১০টির মতো স্থায়ী কারাখানা।
সবমিলিয়ে অর্ধশতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে শুরু হয়েছে ভেজাল লাচ্ছা-সেমাই। এর বাইরে আর কয়েকদিনের মধ্যে আরো অন্তত ২০ টি কারখানায় খোলা আকাশের নিচে লাচ্ছা-সেমািই উৎপাদন শুরু হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। ৫-৭ দিনের মধ্যে বাজারে লাচ্ছা-সেমাইয়ের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে পুরোদমে তখন শুরু হবে নিম্নমাণের ও অসাস্থ্যকার পরিবেশে সেমাই তৈরীর ধুম।
অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) এর অনুমোদন নিয়ে স্থায়ী কারখানাগুলো আর কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই ভেজাল ও ন্মিনমানের লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর মহোৎসবে মেতে উঠেতে শুরুকরেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে রাজশাহীতে যে পরিমাণ লাচ্ছা-সেমাইয়ের প্রয়োজন হয়, তা স্থায়ী কারখানাগুলো সরবরাহ করতে পারে না। আবার স্থায়ী কারখানাগুলোর তৈরী লাচ্ছা-সেমাই নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর ফলে ঈদকে ঘিরে এবারও রাজশাহীতে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কারখানা গড়ে উঠেছে বা উঠছে।
আজ দুপুরে রাজশাহী নগরীরর বিসিক শিল্প নগরীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানার ভেতরে এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে গড়ে উঠেছে ৪০টিরও বেশি অস্থায়ী সেমাই কারখানা। এছাড়াও রয়েছে বিশাল, বনফুল, বেলিফুল, রুচিতা, পপুলার, মিষ্টিবাড়িসহ প্রায় ১০ থেকে ১২টি স্থায়ী লাচ্ছা-সেমাই তৈরীর কারখানা। ঈদ উপলক্ষে এসব স্থায়ী এবং অস্থায়ী কারখানায় গত প্রায় কয়েকদিনে ধরে সেমাই উৎপাদন শুরু করেছে। অস্থায়ী কারখানাগুলোতে এখনো সেইভাবে সেমাই তৈরী শুরু হয়নি।
কারণ তাদের সেমাই উৎপাদনের দিনই সাধারণত বাজারজাত করা হয়। তাদের সেমাই রাখার জায়গা নেই বলে জোরালোভাবে এখনো তারা উৎপাদন শুরু করেনি। তবে স্থায়ী কারখানাগুলোতে এরই মধ্যে প্রায় পুরোদমে লাচ্ছা তৈরী শুরু হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারজাতও শুরু করেছে। তবে যারা উৎপাদনে গেছে, তাদের মধ্য অধিকাংশ কারাখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে প্রতিদিন শতশত খাচি খোলা লাচ্ছা-সেমাই তৈরী হচ্ছে।
সরেজমিন নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় গড়ে উঠা কয়েকটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী কারাখানাগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই সেমাই তৈরী করে চলেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু অস্থায়ী কারখানাগুলোতে খুব গোপনে সেমাই তৈরী করা হচ্ছে। বিসিক এলাকায় গড়ে উঠা সবগুলো কারখানাই স্টিল, প্লাস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার দুই-একটি রুম ভাড়া করে অথবা কারখানা মালিকরা নিজেরাই অস্থায়ী সেমাই কারখানা গড়ে তুলেছেন।
অনুসন্ধানে দেখো গেছে, এসব কারখানার মালিকরা প্রশাসনের চোখের আড়ালে বা ম্যানেজ করে সেমাই তৈরী করে যাচ্ছেন অনেকটা গোপনে। কেউ কেউ দিনের বেলা আবার কেউ রাতের আঁধারেও তৈরী করছেন খোলা বা প্যাকেটজাত লাচ্ছা-সেমাই। বিএসআটিইয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই গোপনে এসব অবৈধভাবে নোংরা ও অসাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমাণের সেমাই তৈরীর দৃশ্যও দেখা গেছে।
আবার তৈরীকৃত সেমাইয়ে মেশানো হচ্ছে নিম্নমাণের উপাদান ও ক্ষতিকারক রং। তবে কোনো ক্ষেত্রে ভালো মাণের সেমাইও তৈরী হচ্ছে এসব কারখানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি অস্থায়ী কারখানার মালিক বলেন, ‘অস্থায়ী কারাখানা মালিকরা বছরের এই সময়টায় শুধু লাচ্ছা-সেমাই তৈরী করেন। কেউ কেউ নিজের বাড়িতেই। আবার কেউ অন্যের জায়গা মাস দুয়েকের জন্য ভাড়া নিয়ে গোপনে তৈরী করেন লাচ্ছা-সেমাই।
.বনফুল, রুচিতাসহ এরা কয়েকটি স্থায়ী কারখানার কয়েকজন শ্রমিক নিশ্চিত করেছেন, এই সময়ে চাহিদা প্রচুর থাকার কারণে সঠিক মাণের সেমাই তারাও তৈরী করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে অসাধু মৌসুমী ব্যাবসায়ীরাও কারখানা গড়ে তুলে ভেজাল ও নিম্নমাণের লাচ্ছা-সেমাই উৎপাদন করছেন। সবমিরিয়ে এসব কারখানাগুলোতে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার খাঁচি সেমাই তৈরি হচ্ছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা ও সেমাই রাতের আঁধারেই চলে যাচ্ছে মহানগরীর সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। আবার কয়দিন পরে নগরীর বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসবে পাইকারী দরে লাচ্ছা কিনতে। তখন চাহিদা আরো বাড়বে। সেইসঙ্গে বাড়বে উৎপাদনের মাত্রাও।
এসব প্রসঙ্গে বিএসটিআই এর রাজশাহী আঞ্চলিক উপ-পরিচালক আলতাব হোসেন জানান, রমজান মাস শুরুর পর থেকেই নগরীতে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন তারা। অস্বাস্থ্যকর বা অনুমোদনহীন কারাখানায় সেমাই তৈরী হলে সেখানেও অভিযান চালানো হবে।