1434987459

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ জুন: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দিতে শর্ত জুড়ে দিয়ে মায়ানমার ‘অতিরিক্ত’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সেখানে জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মায়ানমার বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দিতে শর্ত হিসেবে দেশটিতে আটক ৫শতাধিক অভিবাসীকে বাংলাদেশে আনার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বিষয়টিকে মায়ানমারের বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।আমরা তাদের (মায়ানমার) আটক লোকদের নাম-ঠিকানা সম্বলিত তালিকা পাঠানোর কথা বলেছি, তারা বাংলাদেশি হলে আমরা অবশ্যই ফেরত নেবো।মানবপাচারের শিকার মায়ানমারে আটক লোকদের পরিচয় যাচাই না করে ফেরত নেবে না বাংলাদেশ।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিজিবি-এর নায়েক রাজ্জাককে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে শর্ত দিয়ে অতিরিক্ত করছে মায়ানমার। কেননা মায়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিজিপির রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং দেশটিতে আটক অভিবাসীদের ইস্যু সম্পূর্ণ আলাদা।অভিবাসীদের বিষয়টি তদারকি করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর বিজিবি সদস্য রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়ার ইস্যুটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে।আমরা নিশ্চিতভাবে আশাবাদী অবিলম্বে রাজ্জাককে ফেরত নেওয়া হবে, যোগ করেন তিনি।গত ১৭ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরার নাফ নদী সংলগ্ন সীমান্ত থেকে দায়িত্বরত বিজিবি-এর নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় বিজিপি।২২ জুন সোমবার রাজ্জাক ফেরত দিতে বঙ্গপোসাগরের মায়ানমার সীমান্ত থেকে উদ্ধার হওয়া অবৈধভাবে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়াগামী ৫ শতাধিক অভিবাসীকে বাংলাদেশে ফেরত আনার শর্ত দেয় মায়ানমার।তবে সংবাদমাধ্যম বলছে, পাচারের শিকার উদ্ধার হওয়াদের বেশির ভাগই মায়ানমারের নাগরিক।

সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসিড অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০২-এর আওতায় বর্তমানে বিচারাধীন ১ হাজার ৮১টি মামলা আছে।বিভিন্ন মামলায় বিচারে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, আর যাবজ্জীবন হয়েছে ১১৬ জনের,’ বলেন তিনি। এদিকে, সংসদে সরকারি দলের সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, বাংলাদেশের কারাগারে ৫০২ জন বিদেশী নাগরিক আটক রয়েছেন।মন্ত্রী বলেন, আটককৃত বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে মায়ানমারের সর্বাধিক ২৩৭ জনের মধ্যে কয়েদী ৯ জন, বিচারাধীন ২০৮ জন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ২০ জন।প্রতিমন্ত্রীর বলেন, মায়ানমারের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের কারাগারে আটক রয়েছেন। ভারতের ২০২ জনের মধ্যে কয়েদী ৪৩ জন, বিচারাধীন ১০৩ জন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ৫৬ জন। এছাড়া পাকিস্তানের ৪৩ জনের মধ্যে কয়েদী ৮ জন, বিচারাধীন ৩৩ জন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ২ জন। নেপালের ২ জনই মুক্তিপ্রাপ্ত। তানজানিয়ার ৩ জনের মধ্যে কয়েদী ২ জন, বিচারাধীন ১ জন। নাইজেরিয়ার ১০ জনই বিচারাধীন এবং মালয়েশিয়ার ১ জন বিচারাধীন, ক্যামেরুনের ২ জন বিচারাধীন, পেরুর ১ জন বিচারাধীন, ও আলজেরিয়ার ১ জন বিচারাধীন।

সরকারি দলের সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চ রাজাকারের নামে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। শনাক্তপূর্বক তাকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়।রেড অ্যালার্ট নোটিশটি ইন্টারপোল সদর দপ্তরসহ এর সদস্যভুক্ত সব দেশে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, মানব পাচার রোধে সরকার বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য মো. তাজুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।প্রতিমন্ত্রী বলেন,দু’মাস অন্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয়/আন্তঃসংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির সভা সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মানব পাচার প্রতিরোধে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিসমূহ মানব পাচার প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনের লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে। মানব পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে।তিনি বলেন, মানব পাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং মানব পাচারকারীরা আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে জড়িত বিধায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো উন্নত ও আধুনিক ট্রেনিং প্রদান, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তথ্য আদান-প্রদান এবং সর্বমহলের সহযোগিতার মাধ্যমে মানব পাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১২-১৪ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানব পাচার প্রতিরোধে সংক্রান্ত প্রতি মাসে অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানব পাচার বিশেষত নারী ও শিশু পাচার সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার জন্য গঠিত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হ”েছ।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে সকল আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সম্প্রতি অবৈধভাবে সমুদ্র পথে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোস্ট গার্ডের বর্তমান সময়ের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়েছে। যেহেতু সমুদ্র পথে মানব পাচার রোধে কোস্ট গার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে সেহেতু কোস্ট গার্ড গৃহীত মানব পাচার বিরোধী কর্মকা-ের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ১টি প্যাট্রল ক্রাফট এবং ১টি অত্যাধুনিক হাই স্পীড মেটাল শার্ক বোট’ সার্বক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম গহিরা অঞ্চলে টহলে নিয়োজিত রয়েছে। টহল কার্যক্রম বৃদ্ধির ১টি করে হাই স্পীড মেটাল শার্ক বোট’ কুতুবদিয়া এবং সাঙ্গু স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে। শাহপরী, টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন্স উপকূলীয় অঞ্চলে ২টি অত্যাধুনিক হাই স্পীড মেটাল শার্ক বোট দ্বারা টহল প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার, ইনানী ও মহেশখালী উপকূলীয় এলাকায় ¯’ানীয় কাঠের বোট দ্বারা টহল দেয়া হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানবপাচার বিষয়ক তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দ্রুত ও নিশ্চিত অভিযান পরিচালনার জন্য উল্লেখিত অঞ্চলসমূহে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, মানব পাচার রোধকল্পে নদী ও সমুদ্র পথে এবং দালাল চক্রকে আটক করতে চট্টগ্রামে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাসমূহে কোস্ট গার্ড নিয়মিত ফুট প্যাট্রল পরিচালনা করছে।তিনি বলেন, মানব পাচারের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে কোস্টগার্ড তার অধীনস্থ অধিক্ষেত্রসমূহের এলাকায় নিয়মিত প্রচারণা এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনামূলক তথ্য জনগণের মাঝে প্রচার করছে।