Rajshahi City Dust News 23-6-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ২৩ জুন: রাজশাহী মহানগরীর পরিবেশ উন্নয়ন এবং পৌরসেবা সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন ২০০৯ সালের পহেলা জুলাই হতে রাত্রিকালীন আর্বজনা অপসারণ চালু করে। এরপর থেকে সারাদিনে ময়লা ও আবর্জনা রাতের মধ্যে পরিস্কার করা হতো। ফলে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই নগরী রাস্তাগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে দেখতে পেতেন নগরবাসী। দেশে এই প্রথম রাত্রিকালীন এই বর্জ্য অপসারম চালু করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। রাতের বেলায় বর্জ্য অপসারণ করা হলেও সারাদিনে ময়লা-আবর্জনা এখন রাস্তার ওপরে ফেলা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না মহাসড়কও। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ গড়ে উঠেছে। ফলে গোটা নগরীই যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।এবিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী এডভোকেট তন্ময় স্যানাল বলেন, রাজশাহীতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। আবর্জনার জন্য এখনো নিজস্ব ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নেই। নগরীর তরল বর্জ্য তারা অনায়াসে পাশে পদ্মা ও বারণই নদীতে ফেলছে। এতে এই দুটি নদী বিশেষ করে ছোট নদী হিসেবে বারণইয়ে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিষাক্ত বর্জ্যে এই নদীর মাছ এখন নেই বললেও চলে। নেই জীব-বৈচিত্র্যও। পানির রঙ কালো হয়ে গেছে। এবিষয়ে বার বার সতর্ক করে কোনো ফল হচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

নগরীবাসী জানান, ২০০৮সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছিলেন। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়েই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা সংগ্রহ করতো। সড়কের ময়লাও রাতেও পরিস্কার করা হতো। ফলে সকাল হতে হতেই পরিচ্ছন্ন নগরীর চেহারা পেতেন সবাই। কিন্তু এখনো এই ব্যবস্থা চালু থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। গতকাল রোববার নগরীর মূল শহর ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে সেখানে খোদ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। নগরীর তালাইমারীতে (নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির সামনে) রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কেই ওই এলাকার সব আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের ভ্যানে করে বাদি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে এখনে জমা করা হয়। রাতে সেগুলো ট্রাকে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সিটি বাইপাস এলাকায় ভাগাড়ে। ময়লাগুলো এরকমভাবে মহাসড়কে ফেলে রাখায় দুর্গন্ধে সেখান দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ময়লাগুলো গাড়ির চাকার সঙ্গে লেগে আশোপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। নোংরা হয়ে থাকছে মহাসড়ক। একই অবস্থা নগরীর সরকারী মাদ্রাসা মোড়ে। নগরীর সাহেব বাজার থেকে কোর্টের এই সড়ক দখল করে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। বৃষ্টির পানিতে এগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা এলাকাকেই দুর্গন্ধ করে তুলেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট ও মেইনগেটের মাঝামাঝিতে মহাসড়কে ফেলা হচ্ছে ওই এলাকার ময়লা। এখানেও গড়ে উঠেছে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার স্তুপ। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে নাক চেপে ধরা ছাড়া উপায় থাকে না। নগরীর পঞ্চবটী ও মঠপুকুর এলাকাতেও রাস্তা দখল করে করা হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়। এভাবে নগরীজুড়েই যেন ভাগাড় তৈরি করেছে সিটি কর্পোরেশন। এতে পচা ময়লা ও আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরজীবন।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন জানান, প্রতি অর্থবছরে পরিচ্ছন্নতাখাতে সিটি কর্পোরেশন প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু নগরীকে এখনো পরিচ্ছন্ন করা যায়নি। কারণ, ময়ল-আবর্জনা ফেলার জন্য এরইমধ্যে ৬টি সেকেন্ডারি পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ওয়ার্ডে জায়গা না পাওয়ায় রাস্তার পাশে স্তুপ রেখে করে রাতে সরিয়ে নেয়া হয়।তবে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযিম। তিনি বলেন, কর্পোরেশনের বিগত পরিষদ যে পরিচ্ছন্ন নগরী রেখে গিয়েছিল, বর্তমান পরিষদ তা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। তবে এখন থেকে এবিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।