দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ জুন: পাকিস্তানের স্মৃতি তো এত সহজে মুছে যাওয়ার কথা নয়। এই তো মাত্র কয়েকদিন আগেই ‘বাংলাওয়াশ’ হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে আজহার আলির দলকে। টি২০ খেলতে ঢাকায় এসে শহিদ আফ্রিদিও বেশ অম্ল-মধুর কথা-বার্তা বলেছিলেন। দলের মধ্যে জাগরনের ঢেউ তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাঠে নামার পর টের পেয়েছিলেন, বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশ আসলে কী জিনিস!এবার টের পাচ্ছে ভারত। যারা সব সময় বাংলাদেশকে বাচ্চা বলে উপহাস করতো। টিআরপি দিয়ে মাপতো বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ক্রিকেট সম্পর্ক। যে কারণে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে আমন্ত্রণ জানানোর মত সৌজন্যবোধ তারা দেখাতে পারেনি। চলতি সিরিজের আগেও বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী ছিলেন না ধোনি-কোহলিসহ ভারতের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার।
কিন্তু পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ হতে দেখে ভারতীয় বোর্ড কর্তারা ঠিকই বুঝেছেন- এটা নতুন এক বাংলাদেশ। ঝুঁকি কোনভাবেই নেওয়া যাবে না। একপ্রকার জোর করেই তারা ধোনি- কোহলিদের দিয়ে পূর্ণ শক্তির ভারতীয় দলকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশে। এরপরের কাহিনী তো স্রেফ রূপ কথা। বাংলাদেশ যেন রূপকথার গল্পই রচনা করে চলেছে মিরপুরের সবুজ ঘাসে।তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষেপ্রথম এবং বিরলতম এই সিরিজ জয়ে উজ্জীবিত পুরো বাংলাদেশ শিবির। এবার তাদের সামনে ক্রিকেটের প্রবল পরাক্রমশালী ভারতের বিপক্ষে ‘বাংলাওয়াশে’র হাতছানি। আর ভারতের সামনে লজ্জ্বা ঢাকার শেষ সুযোগ।
এমনই এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শেষ ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এলেন ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানালেন, শেষ ম্যাচটা অন্তত আমরা জিততে চাই। এই জন্য সম্ভব সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় দল।প্রশ্ন ছুটে এলো, আপনারা তো বাংলাওয়াশে’র সামনে দাঁড়িয়ে। এ মুহূর্তে বিষয়টা নিয়ে কি ভাবছেন? অশ্বিন জবাব দিলেন, বাংলাদেশ খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। পাকিস্তান সিরিজে ভালো করেছে। তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। যে ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের, সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও ভালো করবে। এমনও হয়তো হবে, আমরাও বাংলাওয়াশের শিকার হতে পারি।বাংলাওয়াশ নিয়ে এতটাই আতঙ্কিত ভারতের এই স্পিনার। এর আগে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এতটা আতঙ্ক ভারতীয়দের কখনও গ্রাস করেছিল বলে কারও জানা নেই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়েও তারা সিরিজ হারে, হোয়াইটওয়াশ হয়। কিন্তু সেটা তো আর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের মত নয়। মান আর শক্তিতে অস্ট্রেলিয়া ডের এগিয়ে ভারতের চেয়ে। এ কারণে অনুভূতির মাত্রাটাও ভিন্ন। কিন্তু একি পরিবর্তিত বাংলাদেশকে দেখছে ভারত! নিজেদের চোখকেই যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না অশ্বিনরা।
ভারতের ড্রেসিং রুমও অশান্ত হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টা উঠেছিল অশ্বিনের সামনেও। তিনি বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে বললেন, ‘না আমাদের ড্রেসিং রুম শান্তই আছে। কোন সমস্যা নেই।বাংলাদেশ দলের এমন সাফল্য কিভাবে, কোন চোখে দেখছেন ভারতীয় স্পিনার? বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে। দারুন ধারাবাহিক। দলেটিতে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের সমন্বয় ঘটেছে। বিশেষ করে তাদের পেস ডিপার্টমেন্টটা অনেক পরিবর্তণ হয়ে গেছে। যেটা আমাদের সমস্যায় ফেলছে।’
ভারতের মান বাঁচানোর ম্যাচে হোয়াইট ওয়াশ করার হাতছানি টাইগারদেরসফরকারী ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে জয় নিয়ে ইতোমধ্যে শিরোপা নিশ্চিত করে নিয়েছে বাংলাদেশ। পরাক্রমশালী ভারতীয়দের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করার পাশাপাশি টাইগাররা নিশ্চিত করেছে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ।এমন এক পরিস্থিতিতে বুধবার তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ সময় বিকেল তিনটায় মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে দিবা-রাত্রির ম্যাচটি।এই ম্যাচে ভারতীয় দল যখন মান বাঁচানোর জন্য লড়বে তখন নির্ভার টাইগারদের সামনে থাকবে হোয়াইট ওয়াশের হাতছানি। যা এখন বাংলাদেশের মাটিতে ‘বাংলা ওয়াশ’ হিসেবে বেশী পরিচিতি লাভ করেছে। ক’দিন আগে বাংলা ওয়াশের এই মাহাত্ম আপাদমস্তক উপভোগ করে গেছে উপমহাদেশের আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান। তবে কি এই পথেই ভারতকে পাঠাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্বাগতিক দলের অলরাউন্ডার নাসির হোসেন কিছুটা ভদ্রভাবেই বললেন, ‘দলের চিন্তা-ভাবনা আসলে তেমন কিছু না। চেষ্টা থাকবে ম্যাচটি জেতার। আমরা জেতার জন্যই খেলবো এটাই বড় কথা।নাসির বলেন, ‘ড্রেসিংরুমে একটু আগে কথা হয়েছে। ২টি ম্যাচে হেরে গেলে আমরা যেভাবে চাপে থাকতাম এবং গুরুত্ব দিয়ে খেলতাম কালকেও যেন সেভাবেই খেলি। জেতার জন্যই যেন খেলি। সবাই যেন সিরিয়াস থাকে। বিন্দু পরিমাণও ছাড় দেয়ার যাবে না।শেষ ম্যাচের জন্য টাইগাররা সম্পূর্ণ প্রস্তুত উল্লেখ করে নাসির বলেন, ‘ভারত আমাদের উপর তাদের সর্বোচ্চ আক্রমণ করবে এটা আমরা জানি। কে কোন পরিকল্পনায় আমাদের আক্রমণ করলো সেটা দেখার বিষয় নয়। আমরা কি করছি সেটাই আমাদের কাছে বড় ব্যাপার। প্রত্যেকটা ক্রিকেটারেরই আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে, আমরা নিজেদের ভূমিকাটুকুই কেবল মাঠে প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের বড় দল হয়ে ওঠেছে বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কিনা প্রশ্ন করা হলে জবাবে নাসির বলেন, আমি এখনো বলবো না আমরা বড় দল হয়ে উঠছি। আমরা এখনো পুরোপুরি বড় দল হয়ে উঠতে পারিনি। কারণ আমরা হোম কন্ডিশনে খেলছি। আমরা বড় দল কিনা এখনো বলতে পারছি না। বড় হতে হলে নিয়মিতভাবে দুই-তিন বছর আমাদের এরকম খেলতে হবে। তারপর মনে হবে আমরা হয়তো ভালো অবস্থানে আছি।
নাসির বলেন, ‘পাকিস্তান সিরিজ আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। সেটা ভারতের বিপক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমরা যদি আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে আশা করি ভারতকে হারাতে পারবো।এদিকে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন টাইগার দলের বিষ্ময় বালক মুস্তাফিজুর। এমনটিই মানছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। হুমকি মানলেও এই মুহূর্তে তাকে প্রতিরোধের কোন অস্ত্র পায়নি বলেই প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন সফরকারী দলের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তার (মুস্তাফিজুর) যদি কোন প্রতিপক্ষ না থাকে তাহলে আমরা কি করব? আমরা কি তাকে অপহরণ করব?এবার তরুণ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন ভারতীয় অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে মুস্তাফিজকে যথাযথ সম্মান জানানোর কথাও বলেন তিনি।
তিন ম্যাচ সিরিজের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারকে ব্যক্তিবিশেষের দায় নয় ‘দলগত পরাজয়’ হিসেবেই দেখছেন অশ্বিন।মঙ্গলবার মিরপুরে অনুশীলন শেষে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আইবিএন লাইভ’র কাছে এসব কথা বলেন অশ্বিন।অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট শিকার করে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান ১৯ বছর বয়সী পেসার মুস্তাফিজ। আগামী ম্যাচে তাকে কিভাবে সামলাবেন জানতে চাইলে রসিকতা করে অশ্বিন বলেন, মুস্তাফিজকে তো আমরা কিডন্যাপ করতে পারব না!এরপর তিনি বলেন, সে (মুস্তাফিজ) সত্যিই খুব ভালো বোলার। তাকে আমাদের সম্মান জানানো উচিত। আশা করি আগামী ম্যাচে তাকে মোকাবেলা করে আমরা বাংলাওয়াশ এড়াতে পারব। সিরিজের শেষ ম্যাচ জেতা ভারতে জন্য এখন চ্যালেজ বলে উল্লেখ করে অশ্বিন বলেন, বাংলাদেশের কাছে সিরিজ পরাজয় আমাদের জন্য সম্মানহানি নয়, একটি শক্তিশালী দলই আমাদের হারিয়েছে।শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জানে এখানে জিততে হলে কী করতে হবে। এখন তাদের অগ্রসর হওয়ার সময়, আগামীতে তারা আরও অনেক শক্তিশালী দলকে পরাজিত করবে।