দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ জুন: যারা একদিন বাংলাদেশকে অবহেলা করতো তারাই এখন এ দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। সেই সূর্য উদিত করতেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম।
আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন। আওয়ামী লীগ ত্যাগ-তিতীক্ষার মাধ্যমে বাংলার মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করেছে। দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই ত্যাগের সুফল আজ বাংলার মানুষ পাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশর মানুষ কিছু পায় এখন মানুষের গোলাভরা ধান আছে, পুকুর ভরা মাছ আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমরা বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে তুলে দেব।আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সব ত্যাগ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১ সালে দেশে ফিরে এসে আমি প্রায় প্রতিটি জায়গায় গিয়ে শুনেছি এখানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। বাঙালিক স্বাধীনতা এনে দেবেন, এই অভিপ্রায় থেকে বঙ্গবন্ধু সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন।
আওয়ামী লীগের অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে দলটির ঐতিহাসিক ত্যাগ-তিতীক্ষা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সব ত্যাগ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ফিরে আমি প্রায় প্রতিটি জায়গায় গিয়ে শুনেছি এখানে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দেবেন, এই অভিপ্রায় থেকেই তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন। গিয়েছেন গ্রামে গ্রামে। যে কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ তাই করেছে। আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নিতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা পেশ করলেন। এরপর ঘরে বসে থাকেননি তিনি। সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন।আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে তথাকথিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে রাখা হয়। আমরা জানতামই না তিনি কোথায় আছেন।
তবে বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলেছে। এরপর গণঅভ্যূত্থান হলো। তিনি মুক্তি পেলেন। আর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন, আওয়ামী লীগকেও প্রস্তুত রেখেছেন,’ বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের মানুষকে সংগঠিত করার পাশাপাশি বিদেশেও জনমত গড়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তার দুরদর্শী চিন্তাধায় বুঝতে পেরেছিলেন-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না।তাই প্রবাসীদের সহায়তায় লন্ডনে যান এবং সেখানে বসেই সশস্ত্র যুদ্ধের সব কৌশল ও পরিকল্পনা করেন। সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন।
৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশনা দিতেন সে অনুযায়ীই বাংলাদেশ চলতো এবং মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো বলেও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা।আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিদের্শ দিয়েছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে। মানুষও তার ডাকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, কিছু রাজাকার ও পাকিস্তানিদের পদালেহনকারী ছাড়া।এমনকি তার নির্দেশ ছাড়া বাংলাদেশে আসা তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খানের জন্য খাবারও রান্না হয়নি, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ছাড়াও দেশের মানুষকে অধিকার আদায়ের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নিদের্শেই প্রত্যেক এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হয়।মাইকিং করে, টেলিগ্রাম পাঠিয়ে কিংবা লিফলেট বিতরণ করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা প্রচার করা হয়। এতে বাঙালি জাতি সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়। আর তাতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পকিস্তানের অনুচররা।২৫শে মার্চ কালো রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘদিন একটি সেলে বন্দি রেখে জুলুম অত্যাচার করা হয়েছে। তবে তিনি জানতেন এদেশ স্বাধীন হবে। তাই পাকিস্তানের জেলে বন্দি থেকেও বাংলার মানুষের মুক্তির জয়গান গেয়েছেন, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি তাদের ছেলে-মেয়েদের ওপরও নির্যাতন করেছে পাকিস্তানিরা। কিন্তু তারা কখনও মাথা নত করে নাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল ছিল।এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর শক্তি। শক্তিশালী সংগঠন করেছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়েছে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করেছে উল্লেখ করে বাণীতে তিনি আরো বলেন, রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-সন্ত্রাস, দুর্নীতি-নিরক্ষরতামুক্ত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তিনি দেশের প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তি এখনও জনগণের এই উন্নয়নকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টায় থাকলেও দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিবে বলে তিনি বাণীতে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।