দৈনিকবার্তা-সিলেট, ২৩ জুন: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটকে তাল ঝুলিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আমিনুল হক ভূইয়ার পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ভবন) আন্দোলনরত শিক্ষকদের ঝুলিয়ে দেয়া তালা ভেঙে ফেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা।মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এসে তারা তালা ভেঙে দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে ঢোকার সুযোগ করে দেয়।
মঙ্গলবার উপাচার্য আসার আগেই সাড়ে ৭টায় উপাচার্য ভবনসহ অপর প্রশাসনিক ভবনের (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ভবন) ফটকে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহ্বাহক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলমজানান, এই উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আমাদের আন্দোলন চলবে।অপরদিকে উপাচার্যের সমর্থক শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ফুডকোর্টের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন।এক পর্যায়ে বেলা ১টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের কর্মীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ভবনের তালা ভেঙে বাইরে অপেক্ষারত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়।
তবে ওইসময় ছাত্রলীগের কোনো প্রথম সারির নেতা উপস্থিত ছিলেন না। নেতারা তখন ভবনের ফটকের সামনেই অবস্থান নেয় এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। আধঘণ্টা পর তারা এই স্থান ত্যাগ করে।প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন থেকে উপাচার্যের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও প্রশাসন পরিচালনায় অযোগ্যতার পাশাপাশি নিয়োগে অনিয়ম ও আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি প্রশাসনিক পদ ছাড়েন ৩৫ শিক্ষক, যাদের মধ্যে অধ্যাপক জাফর ইকবালও ছিলেন।সরকার সমর্থক শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২৩ এপ্রিল জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠক ডেকে দুই মাসের ছুটিতে যান উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া।তার অবর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস অতিরিক্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পান।
ছুটির শেষ হওয়ার আগেই গতকাল ভিসি কর্মস্থলে ফিরেছেন। তাই গতকাল থেকে তাকে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।কর্মস্থলে ফিরেই ভিসি বিশ্বদ্যিালয়ের নতুন প্রক্টর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন।প্রফেসর কামরুজ্জামান ছাড়াও নতুন তিন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়োগ অবিলম্বে কার্যকর হবে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের শিক্ষকরা উপাচার্য কার্যালয়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ফটকের সামনেই অবস্থান নেন।তবে উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূইয়া ক্যাম্পাসে আসেননি।
প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।এরআগে, উপাচার্য আমিনুল হক ভুঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেন তারা।জানা গেছে, ছুটি শেষ হওয়ার আগেই সোমবার কাজে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রক্টরসহ প্রশাসনের চারটি পদে নিয়োগ দেন।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা। সোমবার সকাল ৯টার দিকে কাজে যোগ দেন উপাচার্য মো. আমিনুল হক ভূঁইয়া। উপাচার্য প্রক্টর হিসেবে বন ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়োগ দেন।
নিয়োগপ্রাপ্ত তিন জন নতুন সহকারি প্রক্টর হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিউল ইসলাম, গণিত বিভাগের প্রভাষক ওমর ফারুক ও আইপিই বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জাহিদ হাসান। তারা সবাই সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের একাংশ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ এ সমর্থক। যোগ দেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত শিক্ষকদের আরেক অংশ উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে পারেননি।