32592_172

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জুন: ২১শে জুন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। কারণ এদিনই প্রথমবারের মতো ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো টাইগাররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম, সর্বত্রই চলছে টাইগার বন্দনা।এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে হারানোয় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমসহ সর্বত্রই প্রসংশিত হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ভারতবধের খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের প্রসংশায় পঞ্চমুখ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।ক্রিকইনফো, আল-জাজিরা, ক্রিকবাজের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে বাংলাদেশের এ ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের খবর। টাইগারদের ভূয়সী প্রসংশা করেছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্রগুলো। কোনো কোনো পত্রিকার শিরোনাম,সিরিজ জিতে ইতিহাস বাংলাদেশের। বয়:সন্ধি পেরিয়ে সাবালক সাকিবরা। বাঙালির হাতে ঢাকায় নয়া ইতিহাস।আনন্দবাজারের শিরোনাম, বাংলাওয়াশের গর্জনের সামনে বিপন্ন ব্র্যান্ড ধোনি।অভিষেকের পর প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১১ উইকেট শিকার করে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছেন তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজের বোলিং তোপেই গুড়িয়ে গেছে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ,এমনটা লিখেছে এনডিটিভি।আর টাইমস অব ইন্ডিয়ার শিরোনাম, মুস্তাফিজের জাদুতেই ঐতিহাসিক সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।সিরিজ জয়ের পর এবার জয়ের ব্যবধানকে ৩-০ তে নেয়ার অপেক্ষায় বাংলার টাইগাররা।

এক ম্যাচ হাতে রেখে ইতোমধ্যে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের ধরনটা এতটা দাপুটে ছিলো যে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। তাই বাংলাদেশের এমন কীর্তিতে জয়ধ্বনি না করে পারেনি বিশ্ব মিডিয়া। গুরুত্ব সহকারে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয় প্রচার হয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়।পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের টাটকা স্বাদ নিয়েই ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের আগেও কল্পনা করতে পারেনি ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ পকেটে ভড়বে টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানের জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচ ৬ উইকেটে জিতে নেয় মাশরাফিবাহিনী। তাই বিশ্ব মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে। ঝড়ের মাত্রাটা এতই বেশি ছিলো যে, বাংলাদেশের জয়োধ্বনি না করে পারেনি বিশ্ব মিডিয়া। বিশেষভাবে ভারতের মিডিয়ায়।ভারতের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা দৈনিক আনন্দবাজারে একটি রিপোর্টে শিরোনাম করেছে, বাংলাওয়াশের গর্জনের সামনে বিপন্ন ব্র্যান্ড ধোনি।’আর ঐ রিপোর্টের ভেতরে বেশিরভাগ অংশেই বাংলাদেশ, অধিনায়ক মাশরাফি ও তরুন-তুর্কী মুস্তাফিজুরের প্রশংসা করা হয়েছে। মাশরাফিকে নিয়ে বলা হয়েছে, ‘সিরিজ জয় নিশ্চিত হবার পর মাঠে শুধু লাফাতেই শুরু করে দিলেন মাশরাফি। কে বলবে, তার হাটুঁতে এক নয়, দুই নয়, ছয়টি অস্ত্রোপচার।মুস্তাফিজুরকে নিয়ে ঐ রিপোর্টে লেখা হয়, অধিনায়কের একটা হাত অবিরাম ঘুরে বেড়া”েছ উনিশ বছরের এক বাঙ্গালি পেসারের মুখে, হাতে, চুলে। মুস্তাফিজুর রহমানকে আজ ছুঁেয় না দেখলে আর কবে দেখবে পদ্মাপার?।

কোলকাতার আরেক দৈনিক উত্তরবঙ্গ সংবাদ একটি রিপোর্টে শিরোনাম করেছে, ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। অন্য এক জায়গায় মুস্তাফিজুরের প্রশংসা করে, ‘ছবিসহ বিস্ময় বালক শিরোনাম দিয়েছে।ভারতের আরেক প্রচার মাধ্যম এনডি টিভি শিরোনাম দিয়েছে, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড ঐতিহাসিক সিরিজ জয়।ভারতের টাইমস ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে শিরোনাম দিয়েছে, ‘মুস্তাফিজুর ঝলকে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়কে ভালো চোখে দেখেনি পাকিস্তানের জনপ্রিয় গনমাধ্যম দ্য ডন। কারন বাংলাদেশের এমন জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলাই অনিশ্চিত হয়ে গেছে পাকিস্তানের। তাই প্রথম ম্যাচের পর পাকিস্তানের সাবেক খেলোয়াড় সরফরাজ নেওয়াজ তো বলেই বসলেন, পাকিস্তান যাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না খেলতে পারে, তাই বাংলাদেশের কাছে ভারতের ইচ্ছাকৃত হার। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পরও প্রশংসা করে কোন সংবাদ তো ছাপায়ইনি। উল্টো ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে ডন পত্রিকাটি। ম্যাচ নিয়ে একটি রিপোর্ট করতে গিয়ে শিরোনাম দিয়েছে, ভারতকে ধ্বংসের নায়কের আদর্শ মোহাম্মদ আমির। কারন প্রথম ম্যাচের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিজের আদর্শ হিসেবে আমিরকে বলেছিলেন মুস্তাফিজুর।

আইসিসির ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে সদ্যই সাত নম্বর স্থানটি পাকাপাকি করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে মর্যাদার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির একটি স্থানও এখন বাংলাদেশের অধিকারে। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কী সত্যিই সাত নম্বরে? আইসিসির র‌্যাঙ্কিং হয়তো বলছে সাত, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এই মুহূর্তে বিশ্বের দুই নম্বর ক্রিকেট শক্তি বাংলাদেশ!আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক জটিলতা। বিভিন্ন হিসাবের চৌহদ্দি পেরিয়ে চূড়ান্ত করা হয় এই র‌্যাঙ্কিং। বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীরই মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া এই জটিল র‌্যাঙ্কিং একটু দূরে সরিয়ে রেখেই দাবি করে ফেলা যায় ব্যাপারটা। ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ের অনুপাতে আসলেই বিশ্বের দুই নম্বর দল মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের বাংলাদেশ।সুনীল গাভাস্কার দারুণ খুশি। নিজের দেশের পরাজয়ে হৃদয়ের গভীরে বেদনা হয়তো আছে, কিন্তু সেই বেদনা ছাপিয়ে এই কিংবদন্তির একরাশ শুভেচ্ছাই রয়েছে বাংলাদেশের জন্য। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বাচ্চা বলে উপহাস করা হলেও তারা আর ‘াচ্চা নেই।ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভির সঙ্গে সরাসরি এক ভিডিও আলাপনে তিনি বলেছেন, একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন অবশ্যই একটা শক্তি।ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুটি ওয়ানডে সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, এই দুটো জয়ই প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া। জয়ের ব্যবধান দেখুন। দুটোতেই বড় ব্যবধানে হেরেছে ভারত।