national-id-54310-765x510

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জুন: জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে তা পুনরায় নিতে ১০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে জানিয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তার আগ পর্যন্ত এখনকার মতো বিনা খরচেই জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন করা যাবে।বর্তমানে ইসির তথ্যভাণ্ডারে বাংলাদেশের ৯ কোটি ৬২ লাখের মতো ভোটারের তথ্য রয়েছে। অগাস্ট থেকে এসব নাগরিককে উন্নত মানের স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়ার কথা রয়েছে।আগামী বছরের শুরুতে আবার ভোটারযোগ্যদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে। আঠারোর কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।প্রথমবার বিনামূল্যে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে নাগরিকরা। এ কার্ডের মেয়াদ হবে ১৫ বছর। নির্ধারিত সময়ের পর এ জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নেও ফি দিতে হবে।

এছাড়া ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্র সংগ্রহ, সংশোধনে সাধারণ সময়ে অন্তত দুইশ’ টাকা এবং দ্বিতীয় ও তার পরের বার থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা করে ফি দিতে হবে।ইসি সচিব বরাবর পে অর্ডার বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।১ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যক্তিগত ফি দিতে হলেও সরকারি সংস্থা ও বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইসির চুক্তির এককালীন চার্জ এখন থেকে কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন তথ্য যাচাই ও তথ্য সরবরাহে ইসি এককালীন ৫ লাখ টাকা ফি নেবে।ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক,জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিগগির চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছে ইসি।বিনামূল্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা, নবায়ন বা হারানো কার্ড উত্তোলনের দিন শেষ হলো। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই এসব কাজের জন্য টাকা দিতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এ সংক্রান্ত জারি করা ডজ্ঞাপন হাতে এসে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে ফি হিসেবে ১শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা গুণতে হবে। সোমবার বাংলাদেশ সরকারি প্রিন্টিং প্রেস (বিজি প্রেস ) থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের গেজেট ইসিতে আসে। এতে আগামী ১ সেপ্টম্বর থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, নবায়ন বা হারানো কার্ড উত্তোলনের জন্য নাগরিকদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।এ বিষয়ে ইতোপূর্বে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রথমবার বিনা পয়সায় নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বারবার বিনা পয়সায় এটি দেওয়া অনেক ব্যয়বহুল। আর জাতীয় পরিচয়পত্র একটি বিরাট সম্পদ। এটা সংরক্ষণ করা বা নির্ভুলভাবে তথ্য দিয়ে এনআইডি নেওয়া নাগরিকের দায়িত্ব। তাই সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন বা নবায়নের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। যার ছাপানো গেজেট সোমবার হাতে পেলো ইসি।

এক্ষেত্রে নবায়নে জন্য ১শ’ টাকা জরুরি হলে ১শ’ ৫০ টাকা, হারানো বা নষ্ট হওয়ার কারণে প্রথমবার নতুন আইডি কার্ড পেতে ২শ’ টাকা জরুরি হলে ৩শ’ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩শ’ টাকার, জরুরি হলে ৫শ’ টাকা, পরবর্তী যেকোনো বার আবেদনের ক্ষেত্রে ৫শ’ টাকা ও জরুরি হলে ১ হাজার টাকার গুণতে হবে।এছাড়া প্রথমবার এনআইডি সংশোধনের জন্য ২শ’ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩শ’ টাকা পরবর্তী যেকোনো বারের জন্য ৪শ’ টাকা গুণতে হবে।অন্যদিকে এনআইডির নির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত সংশোধনের জন্য প্রথমবার ১শ’ টাকা, দ্বিতীয়বার ২শ’ টাকা এবং পরে যেকোনো বার আবেদনের ক্ষেত্রে ৩শ’ টাকার ফি দিতে হবে।২০০৭ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের প্রকল্প হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। বর্তমান পর্যন্ত ৯ কোটি ২০ লাখ নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছে ইসি। এদের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি নাগরিকের আইডি কার্ডের মেয়াদ রয়েছে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এপর তাদের আইডি নবায়ন করতে হবে।এদিকে, অপরাধী শনাক্ত করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারের সুযোগ দিতে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।সির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহা-পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, অপরাধীদের শনাক্ত করা এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার রোধসহ বিভিন্ন ধরনের জাল জালিয়াতি রোধে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাইয়ে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভূমিকা রাখবে, যাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা দপ্তর দ্রুতই তথ্য ভাণ্ডারের অন্তত একডজন তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পাবে।নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ দুটি সংস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার প্রস্তাবে গত মঙ্গলবার অনুমোদন দেয়।বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পাসপোর্ট অধিদপ্তর বর্তমানে একই ধরনের চুক্তিতে ইসির তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করছে।নাগরিকদের তথ্য নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে পুলিশের দেওয়া আবেদনে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্ত করা, অপরাধ তদন্ত, ব্যক্তির স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা যাচাই, বিদেশযাত্রা, আসামির বিদেশযাত্রা রোধ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও মানবপাচার রোধসহ যাবতীয় কার্যক্রমে নাগরিকদের পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করা হবে।

চাকরির ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিচিত যাচাই ও তার পাসপোর্ট নম্বর সরবরাহের জন্য ইসির ডেটাবেইজ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।র‌্যাবের আবেদনে বলা হয়, সন্দেহভাজন অপরাধীদের শনাক্ত করা ও ফৌজদারি মামলা তদন্তের প্রয়োজনে র‌্যাবের ক্রিমিনাল ডেটাবেইজে অপরাধীদের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এর সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য মিলিয়ে অপরাধী শনাক্ত করা হবে।আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও টেলিযোগাযোগ সংস্থাসহ অন্তত ৭৫টি সংস্থা এ পর্যন্ত এনআইডি ডেটাবেইজ ব্যবহারে ইসির সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছে।এনআইডি উইং মহাপরিচালক বলেন, মে মাসে আবেদন করা সাতটি সংস্থার সঙ্গে এককালীন ফি দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরও।সমাজ সেবা অধিদপ্তর ইসিকে জানিয়েছে, প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির আওতায় একটা সফটঅয়্যার তৈরির কাজ চলছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশ্লিষ্টদের তথ্য নিয়ে ইউনিক আইডি দেবে অধিদপ্তর। এতে ডেটাবেইজের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।হজযাত্রীদের নাগরিকত্ব ও তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ইসির তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার জরুরি বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ফির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তথ্য যাচাইয়ের বিধান রেখেছে। পাশাপাশি এককালীন ফি দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ডেটাবেইজ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে।সুলতানুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে সংস্থাগুলোকে এককালীন ফির বিনিময়ে অবিলম্বে কানেকটিভিটি’ দেওয়া হবে। কয়েক মাস পরে ব্যক্তি পর্যায় উন্মুক্ত করা হবে।দেশের ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটারের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ইসির তথ্য এই ভাণ্ডারে। এতে প্রত্যেক ভোটারদের নাম, ঠিকানা, পিতা-মাতা, জন্ম তারিখ, পেশা, শিক্ষা, পাসপোর্ট ও টিআইএন নম্বর, আঙ্গুলের ছাপসহ ৩০টির বেশি তথ্য রয়েছে।দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এর মধ্যে অন্তত ১৬টি তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে।