দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ জুন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গী হয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে অংশ নিয়েছিল, তাদের ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারে একের পর এক রায় ঘোষণার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে নবীন প্রজন্মকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে রোববার সংসদে এই দাবি জানান তিনি।বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনার জন্য দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এনে মোজাম্মেল হক বলেন, পাঠ্যপুস্তকে মুক্তি সংগ্রামের ভূমিকা যুক্ত হয়েছে। এই জন্য আমি শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এটাই যথেষ্ট নয়।মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আল বদর ও জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে হবে।কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকার কথা বললেই পূর্ণ সত্য বলা হয় না, এতে অর্ধসত্য বলা হয়। আমাদেরকে পূর্ণ সত্যের কথা বলতে হবে।একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এদের মধ্যে আল বদর বাহিনীর নেতা, রাজাকার বাহিনীর নেতাও রয়েছেন।
রাজাকার, আল-বদরসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজাকার, আল বদরদের একটি তালিকা ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আমলে মুজাহিদরা মন্ত্রী হয়ে এটা ধ্বংস করে দিয়েছে।মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, এটা নিয়ে একটি মামলা হয়েছে। আশা করি, আগামী তারিখেই এটা শেষ হয়ে যাবে। মামলার বাধা দূর হলে আমরা তালিকাটি চূড়ান্ত করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব।এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সনদের সঙ্গে পরিচয়পত্রও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।সম্মুখযুদ্ধের স্থান, বধ্যভূমি, মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী মিত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু একদিনে এত মানুষ আর কখনও নিহত হয়নি। এদিন প্রায় ৫ লাখ মানুষকে খুন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং জাতীয় পতাকা উঠানো হয় না, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দেশে ৫০টি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এ মন্ত্রণালয়ের অধীন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৫টি জেলায় ৩৫টি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬৫টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।মোজাম্মেল হক বলেন, ৬৫টি স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে ৫০টি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১০টি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ৫টি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করে নকশা প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সমুন্নত করে স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে আয় বর্ধক সুবিধাসহ দোকান, হলরুম ও তথ্য প্রযুক্তিসহ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প নামে বর্তমানে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে যা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলা ব্যতিত ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।মোজাম্মেল হক বলেন, ওই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৩০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ১২৭টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ১৯টির নির্মাণ কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী অর্থবছরে সারাদেশে আরো ১০ হাজার বাসস্থান তৈরির বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য সামছুল আলম দুদু’র এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভূমিহীন ও অসচছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ শীর্ষক ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।মোজাম্মেল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে ৪৮৪টি উপজেলায় মোট ২ হাজার ৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান আছে, যা ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে সংস্থানকৃত ২ হাজার ৯৭১টি ইউনিটের মধ্যে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৫১ ইউনিট নির্মাণের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই সবগুলো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪৮টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ৯৭৩টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ৩৬১টি বাসস্থানের দরপত্রের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্বতন্ত্র সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।তিনি বলেন, ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।মন্ত্রী বলেন, ওই প্রকল্পের আওতায় মোট ১ হাজার ৭৮ দশমিক ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলা ব্যতীত মোট ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে।মোজাম্মেল হক বলেন, প্রকল্পটির আওতায় ইতোমধ্যে ৩০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১২৭টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ১৯টির নির্মাণ কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।