দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ জুন: জোড়া খুনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনিকে আবারও রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ঢাকার মহানগর হাকিম আমিনুল হক আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ড বিষয়ক শুনানির জন্য ২৪ জুন তারিখ ধার্য করেছেন। রোববার বিকেলে এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস বখতিয়ারের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।এর আগে বখতিয়ারকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।বখতিয়ার বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
তাঁর মা পিনু খান সরকারদলীয় সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে গাড়ি থেকে গুলি ছুড়লে রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাকিম ১৫ এপ্রিল এবং ইয়াকুব ২৩ এপ্রিল মারা যান। এ ঘটনায় হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রাতে রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। ডিবি পুলিশ তদন্তে এই জোড়া খুনের ঘটনায় বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে শনাক্ত করে। ডিবি ৩১ মে প্রথমে ইমরানকে এবং তাঁর তথ্য অনুযায়ী ওই দিন রাতে বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১ জুন ইমরান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।জবানবন্দিতে তিনি জানান, ১৩ এপ্রিল রাতে বখতিয়ার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রাডো গাড়ি থেকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন। রিমান্ডে থাকাকালে বখতিয়ারও তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন বলে স্বীকার করেন। বখতিয়ার গুলি ছোড়ার সময় ওই গাড়িতে থাকা তাঁর দুই বন্ধু কামাল মাহমুদ ও মো. কামাল ওরফে টাইগার কামাল সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বখতিয়ারের আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়াও সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন
এর আগেও আদালতের নির্দেশে গত ৯ থেকে ১২ জুন চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এমপিপুত্র রনিকে। তবে রনি তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলির কথা স্বীকার করলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেওয়ায় তাকে ফের রিমান্ডে নিতে চাইছে ডিবি পুলিশ।মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ও তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি’র উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস জানান, গত রিমান্ডে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলির কথা স্বীকার করেছেন এমপিপুত্র রনি।
তিনি বলেছেন, গত ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে রাস্তায় যানজট থাকায় বিরক্ত হয়ে কোমর থেকে পিস্তল বের করেন তিনি। মদ্যপ থাকায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। রাস্তায় এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়েন। মুহূর্তেই রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে চলে যান তিনি। নিজে জানতেনও না, তার ছোঁড়া গুলিতেই দু’জন মারা গেছেন। ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে রনি ও তার সহযোগীরা একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম নিহত হন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে। নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৫ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাত আসামিদের নামে রমনা থানায় একটি মামলা করেন।গত ২৪ মে মামলাটির তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা ও অন্যান্য সোর্সের মাধ্যমে রনির ব্যবহৃত গাড়িটি শনাক্ত করা হয়।
গত ৩১ মে মাইক্রোবাসটির চালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান ফকির পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলে রনিকে একই দিন ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।গত ১ জুন দু’জনকে আদালতে পাঠানো হলে ইমরান ফকির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে রনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করলে রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ।আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। কিন্তু রিমান্ডে এমপিপুত্র রনি অসুস্থ হলে তাকে রাজারবাগ পুলিশলাইন্স হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে ৯ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।