দৈনিকবার্তা-সংসদ ভবন(ঢাকা), ২১ জুন ২০১৫: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চারদেশীয় পরিবহন নেটওয়ার্ক বিবিআইএন দেশগুলোর অর্থনীতিতে নবধারার সঞ্চার করে পারস্পরিক সম্পর্কে এক নূতন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে। তিনি আজ সংসদে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সম্প্রতি তার ভূটান সফর বিষয়ে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘চারদেশীয় পরিবহন নেটওয়ার্ক চারটি মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অভিন্ন পরিবহন নেটওয়ার্ক। যা বিবিআইএন দেশগুলোর অর্থনীতিতে সঞ্চার করবে নবধারা এবং পারস্পরিক সম্পর্কে যোগ করতে যাচ্ছে নূতন মাত্রা। অনেকটা ইউরোপের আদলে চারদেশের মধ্যে চলাচল করবে ব্যাক্তিগত গাড়ি ছাড়াও যাত্রিবাহী এবং পণ্যবাহী পরিবহন। উপ-আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন সুদৃঢ়করণে বিবিআইএন মোটর ভেইকল এগ্রিমেন্ট যোগাযোগ কুটনীতির এক অনন্য মাইলফলক। আর এ অর্জনের মূল মানুষটি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিবিআইএন চুক্তিটি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে চার দেশের নির্ধারিত রুটে ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্য এবং যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করতে পারবে। এতে চারদেশের মানুষের মধ্যে পিপল-টু-পিপল কণ্ট্রাক্ট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে, যা দেশগুলোর অর্থনীতিতে সঞ্চার করবে গতিময়তা।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ফেনোমেনা। কানেক্টিভিটি একটি বহতা নদীর মতো। প্রবৃদ্ধির মহাসড়কে এখন আর কেউ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। উন্নয়ন ও অগ্রগতি রূপকথার পরীর মতো চারদিকে ছড়িয়ে দেয় ডানা। সে ডানায় ভর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। ওবায়দুল কাদের বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অধিক সুদৃঢ়। আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগসমূহের প্রতি সরকারের সুদৃঢ় আস্থা ও সমর্থন রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম সার্ক ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় একটি অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ভাবনাটি ভেবেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চার প্রতিবেশী সন্দেহ-সংশয়ের দেয়াল ভেঙ্গে সম্পর্কের এক সোনালী সেতুবন্ধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য আমরা একসাথে চলতে শিখেছি, জনগণের স্বার্থ সুরক্ষায় অভিন্ন ভাবনা ভাবতে পেরেছি। গত ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চারদেশের সড়ক পরিবহন মন্ত্রীদের সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হয়েছে ‘মোটর বেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট ফর দ্য রিজিউনাল অব প্যাসেঞ্জার, পারসন এন্ড কার্গো বেহিকুলার ট্রাফিক বিটুইন বাংলাদেশ, ভূটান, ইন্ডিয়া এন্ড নেপাল।’
তিনি বলেন, চারদেশের মধ্যে পরিবহন সংযোগ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো হলো-ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় হাইওয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্নকরণ, নতুন পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ, কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতি ব্রীজে নতুন চার লেন নির্মাণ, প্রস্তাবিত নতুন পদ্মা সেতুর সাথে বেনাপোল চার লেন, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা-হাটিকুমড়–ল-রংপুর-বুড়িমারি-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক চার লেন, ঢাকা (কাঁচপুর)-নরসিংদী-সরাইল-সিলেট-তামাবিল জাতীয় হাইওয়ে চার লেন এবং বারাইরহাট-হেয়াকো-রামগড় মহাসড়ক চার লেনকরণ প্রকল্প।
মন্ত্রী জানান, সম্মেলন চলাকালে সাইডলাইনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাথে নেপালের সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ঢাকা-কাঠমান্ডু সরাসরি বাস সার্ভিস চালু এবং নেপালের মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, ১৬ জুন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নেমগেল ওয়াংচুক- এর সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় রাজা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়’কে বাংলাদেশে তাঁর একমাত্র বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। এসময় আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ হতে ঢাকা-থিম্পু সরাসরি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা-শিলং-গোহাটি বিদ্যমান বাস সার্ভিস সম্প্রসারণ করে ভূটানের সামধ্রুপ ঝংকার পর্যন্ত চালু এবং ভূটান কর্তৃক সৈয়দপুর বিমান বন্দর ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া ভুটানের পক্ষ হতে বাংলাদেশ হতে খাদ্য, গার্মেন্টস, নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশে ফলমূল ও বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব দেয়া হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, উন্নয়নের অনিবার্য অনুসঙ্গ সড়ক অবকাঠামো। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মাসেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মার ভাগ্যাকাশে যখন কালোমেঘ ছেয়ে যায়, তখনই প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত পদ্মার আকাশে প্রত্যাশার আলো ছড়িয়ে দেয়। পদ্মার দু’পাড়ে এখন সৃষ্টির উৎসব। চলছে নির্মাণের এক মহাকর্মযজ্ঞ। আগামী অক্টোবরে শুরু হতে যাচ্ছে সেতুর মূল পাইলিং এর কাজ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যাবে নদী শাসনের মূল কাজ।
তিনি বলেন, সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে তরুণ প্রজন্মের প্রকল্প মেট্রোরেল স্থাপনের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আইন প্রণয়নসহ কারিগরি ও প্রস্তুতিগত দিকগুলো শেষ হয়েছে। এখন ধাপে ধাপে প্যাকেজগুলোর দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেট্রোরেলের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সকল বাধা অপসারিত হয়ে মোবিলাইজেশনের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে পিপিপি ভিত্তিক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ ইতোমধ্যে ১৪০ কিলোমিটার শেষ হয়েছে। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেনের কাজও শেষ হতে যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে চীন সরকারের সাথে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। প্রায় ৮ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে জি-টু-জি ভিত্তিতে কর্ণফুলীর তলদেশে দিয়ে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চীন সরকারের মনোনীত নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে এ মাসের শেষ সপ্তাহে বেইজিং-এ নির্মাণ চুক্তি সই হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা, ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ এবং বহির্গমণ পয়েন্টগুলো যানজট মুক্ত রাখা, মহাসড়কে যানজট মোকাবিলা, সড়ক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে সরকার সক্রিয় রয়েছে। এবারও ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারবে।