Thakurgoan Handikraphat_Eid pic-1

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ২১ জুন: আসন্ন ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকটি গ্রামের নারীরা। সংসারের কাজের পাশাপাশি দিনরাত পরিশ্রম করে শাড়ি ও বিভিন্ন কাপড়ে জরি, পুঁতি বসানোর কাজ করছেন তারা। প্রত্যাশার বাড়তি আয় করে সংসারে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আনা। তবে মজুরি কম পাওয়ায় অনেকটাই হতাশ তারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ, মুন্সিরহাট, চিলারংসহ আশেপাশের ৭টি গ্রামের ৭ শতাধিক নারী এখন হাতের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। শাড়িতে জরি ও পুঁতি বসানোর কাজ করে সংসারে কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন এসব নারী। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই কাজ করছেন তারা। অভাবের সংসারে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে এমন অনেক কিশোরীও যুক্ত হয়েছে এই শিল্পের সাথে। আবার স্বামী হারা অনেক নারী থেমে যাওয়া সংসারের চাকা সচল করতে নেমে পড়েছেন এই কাজে। তাদের নকশা করা হাজার হাজার শাড়ি প্রতি সপ্তাহে চলে যাচ্ছে রাজধানীর অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতে। সেখানে প্রতিটি শাড়ি বিক্রি হয় ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় পর্যন্ত।

প্রতিটি শাড়িতে হাতের কাজ করতে সময় লাগে কমপক্ষে ৫ দিন। এ কাজ পেতে হলে শাড়ি প্রতি জামানত রাখতে হয় এক হাজার টাকা। কোনভাবে শাড়ির কোন ক্ষতি হলে সেখান থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। তাদের মজুরি দেয়া হয় ১৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা পর্যন্ত। শালেহা ও নজনীন বেগম জানান, এ কাজে যে পরিশ্রম, সে অনুযায়ী মজুরি কম পাচ্ছি। তবে বসে না থেকে সংসারের প্রয়োজনেই এ কাজ করছি। এই শিল্পে সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা এগিয়ে আসতো তাহলে সংস্থাটির পাশাপাশি আমরাও লাভবান হতে পারতাম। মুন্সিরহাট এলাকার সাইফুল আলম জানান, সংসারে অভাব, তাই স্ত্রী এ কাজ করছেন। তবে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাওয়া গেলে সংসারে স্বচ্ছলতা আসতো।

দরিদ্র এসব নারীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ঢাকার যুবক সোহেল খান। তিনি শাড়িতে নকশার সিল বসিয়ে পাঠিয়ে দেন ঠাকুরগাঁওয়ের ঐ নারী কর্মীদের কাছে। তারা সেই শাড়িতে নিপুণ হাতে জরি ও পুঁতি বসান। এই নারী কর্মীদের কাজ করা শাড়ি ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোরশেদ আলী খান জানান, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা হাতের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কিন্তু অনেক নারী তাদের শ্রমের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাইরের কাজ যোগাড় করা গেলে হয়তো তাদের কাছ থেকে ন্যায্য মজুরি পাওয়া যেত। তবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে এলে এই নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের লড়াই অনেকদূর অবধি যাবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন।