1434800343

দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ২০ জুন: চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের খিতাপচর এলাকায় ২৪ নম্বর রেল সেতু ভেঙে তেলবাহী ওয়াগনের ট্যাংকার খালে পড়ে তা ছড়িয়ে যাওয়ায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনটি ট্যাংকার থেকে খালে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল জোয়ারের সময় বোয়ালখালী খালের উজানে প্রায় ১২ কিলোমিটার এবং ভাটায়ও প্রায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এই ফার্নেস অয়েল বোয়ালখালী খাল হয়ে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে।এছাড়া খালের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলী জমি, জলায়শয় ও পুকুরেও এই তেল ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক পুকুরের মাছ মারা যেতে শুরু করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। খালের ছোট ছোট মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠেছে বলে জানা যায়।চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় রেল সেতু ভেঙে খালে পড়া তেলবাহী ট্রেনের দুটি বগি থেকে ফার্নেস অয়েল কর্ণফুলী নদীতেও ছড়িয়ে পড়েছে।শুক্রবার দুপুরে দুর্ঘটনার পর ওয়াগন দুটি বোয়ালখালী খালে ডুবে যায়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ডুবে যাওয়া ওয়াগন দুটি তোলা সম্ভব হয়নি। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়াগন দুটি তুলতে শনিবার পুরো দিন লাগতে পারে।

নদী সংলগ্ন ওই খালটিতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব থাকায় তেল কর্ণফুলীতে ছড়িয়ে পড়ে।ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তেল ছড়িয়ে পড়ায় কর্ণফুলী নদীতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে তেলবাহী ট্রেনটি গোমদণ্ডি-ধলঘাট রেল লাইনের বেঙ্গুরা স্টেশন পার হয়ে ২৪ নম্বর সেতু অতিক্রমের সময় এটি ভেঙে পড়ে। দেহাজারীর ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনটির আটটি ওয়াগনে করে ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।দুর্ঘটনায় ট্রেনটির দুটি ট্যাংকার খালের পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যায়। এছাড়া ইঞ্জিন ও তৃতীয় ট্যাংকারটিও অর্ধেক পানিতে ডুবে ছিল। রেল কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি ওয়াগনে ৩৩ হাজার ৬৪০ লিটার করে ফার্নেস অয়েল ছিল।ধলঘাট স্টেশনের স্টেশন মাস্টার অনুপম দে শনিবার সকালে বলেন, পাঁচটি ওয়াগন রিলিফ ট্রেন এসে টেনে নিয়ে গেছে। দুটি পানিতে এবং অন্য একটি কাত হয়ে আছে।কাত হওয়া ও পানিতে থাকা ট্যাংকার থেকে আগে তেল বের করে নেবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লোকজন। তারপর সেগুলো সরানো হবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ট্যাংকারে থাকা তেল আগে সরিয়ে নিয়ে সেগুলো তুলতে সুবিধা হয়।এরপর সেতুটি মেরামতের কাজে হাত দেবে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে চার দিন সময় লাগবে বলে জানান মোজাম্মেল।সেতুসহ ভেঙে পড়ায় চট্টগ্রাম- দোহাজারি লাইনে রেল চলাচল বন্ধ আছে। এই পথে প্রতিদিন একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে।

শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মকবুল হোসেন।তিনি বলেন, খালে জোয়ার-ভাটার কারণে তেল মারাত্মকভাবে অনেক দূর ছড়িয়ে পড়েছে।খালের আশেপাশে গাছের গোড়ায় ও মাটিতে তেল লেগে আছে। তেল দূষণে কর্ণফুলীতে নদীতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহের কোনো যন্ত্র অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে নেই বলে জানান তিনি।বোয়ালখালীতে সেতু ভেঙে তেলবাহী ট্রেনের দুটি ট্যাংকার পড়ে গেছে খালে, চুইয়ে পড়ছে ফার্নেস অয়েল।বোয়ালখালীতে সেতু ভেঙে তেলবাহী ট্রেনের দুটি ট্যাংকার পড়ে গেছে খালে, চুইয়ে পড়ছে ফার্নেস অয়েল।সেতু ভেঙে পড়া বোয়ালখালী খালটি কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত। ঘটনাস্থল থেকে নদীর দূরত্ব ৯ কিলোমিটার।চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, পানির উপরিতলে থাকা এই তেল জোয়ার-ভাটায় সামনে- পেছনে আসা-যাওয়া করবে।ধীরে ধীরে তেলের ঘনত্ব কমবে। কিন্তু পানিতে তেলের আস্তরণের কারণে সালোক সংশ্লেষণ বিঘ্নিত হতে শুরু করলে জলজ উদ্ভিদ স্থানচ্যুত হবে। বাতাসে ছড়াবে হাইড্রোকার্বন। পানিতে কমবে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ।তেলের সংস্পর্শে আসা জমির পুষ্টিমান কমবে জানিয়ে ইদ্রিস আলী বলেন, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। কর্ণফুলীতে আরেকটি ক্ষত যোগ হল।দুই বছর আগে চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় একই ধরনের একটি দুর্ঘটনার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, সেতুর ভার বহনের ক্ষমতার বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া উচিত ছিল।