দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ জুন: খোশ আমদেদ মাহে রমজানুল মোবারক। শাবান মাস বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে এক ফালি চাঁদ ওঠার মাধ্যমে রহমত, বরকত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, আরব-অনারব- সবার কাছে ফিরে এসেছে মহিমান্বিত তাকওয়ার মাস রামাদান। এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন মুসলমান তাদের ঈমানী চেতনা জাগ্রত করে নেবে। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে অর্জন করে নেবে মহান আল্লাহর ক্ষমা আর মেহেরবানি।‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)।পবিত্র কোরআনের এ আয়াতে রমজান মাসে রোজা ফরজ করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনে ব্যবহৃত ‘সওম’-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় সুবেহ সাদেক হওয়ার আগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত থাকার নাম ‘সওম’ বা রোজা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরতে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করে। আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আজকের দিনে রোজা পালন করছ কেন? ইহুদিরা বলল, আল্লাহপাক বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনদের কবল থেকে এমন দিনে নাজাত দান করেছিলেন। যার কারণে নবী মূসা (আ.) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এই দিনে রোজা পালন করেছিলেন। এ জন্য আমরাও মূসা (আ.)-এর অনুসরণ করে এদিন রোজা পালন করে থাকি। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা তোমাদের চেয়ে মূসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিনে নিজেও রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরও রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন। ইসলামের সেই যুগে আশুরার এ রোজাটি মুসলমানদের ওপর ফরজ ছিল। তবে ইহুদিদের সঙ্গে যাতে মিল না থাকে এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার এ রোজার সঙ্গে আগের দিন বা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখার নির্দেশ যুক্ত করে দিলেন।
হিজরতের ২য় বছর ৬২৪ খ্রি. শাবান মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলমানদের এক মাস রোজা রাখার হুকুম দিয়ে আয়াত নাজিল করেন এবং মাহে রমজানকে সিয়াম পালনের মাস হিসেবে নির্ধারণ করে দেন। তখন থেকেই রমজানের এক মাস রোজা রাখা মুসলমানদের ওপর ফরজ হয়ে গেল। আর রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজার ফরজিয়ত রহিত হয়ে গেল। অর্থাৎ আশুরার রোজা নফল রোজা হিসেবে প্রচলিত হল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ‘রমজান মাসই হল সেই মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে সত্যের দিশারী, সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক-বাতিলের পার্থক্যকারী আল কোরআন। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিন গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা চান না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং হেদায়েত লাভ করে আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা করতে পার, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।যেসব ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় কিংবা সফরে যে ক’টি রোজা রাখতে পারবে না সেসব রোজা অন্য সময় হিসাব করে আদায় করা ওয়াজিব। উপরোক্ত আয়াতে এ ইঙ্গিতও করা হয়েছে যে, রুগ্ন ও মুসাফিরদের অপরিহার্য রোজার মধ্যে শুধু সে পরিমাণ কাজা আদায় করাই ওয়াজিব রোগী সুস্থ হওয়ার পর এবং মুসাফির বাড়ি ফেরার পর যে ক’দিন সুযোগ পাবে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি এতটুকু সময় না পেয়ে এর আগেই মৃত্যুবরণ করে তার ওপর ফিদইয়ার জন্য ওসিয়ত করা জরুরি নয়।
আলহামদুলিল্লাহ, বছর ঘুরে আবার উপস্থিত হয়েছে পবিত্র বরকতময় রমজান মাস। রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের রমজানের পুরো হক আদায় করার তৌফিক দান করেন। আমরা যেন রমজানজুড়ে কামিয়ে নিতে পারি খোদার মেহেরবানি। এ রমজানে খোদা যেন গোটা দুনিয়ায় তার রহমতের চাদর বিছিয়ে দেন। তাবৎ মুসলমান যেন সেই চাদরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে রোনাজারি করতে পারে- হে আল্লাহ আমাদের খাঁটি মুমিন মুসলমান বানিয়ে মুসলমান হিসেবেই জান্নাতুল ফেরদাউসে জায়গা করে দিয়েন। এ রহমতের মাস যে জান্নাত কামানোর মাস।প্রধান ইমাম ও খতিব, কারওয়ান বাজার আম্বরশাহ শাহী মসজিদ, ঢাকা