দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১৯ জুন: গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া কাঁচা রাস্তাটির পুরোটাই কাদায় মাখামাখি। এখানে-ওখানে পানিও জমে থাকে। সেই পানিতে গোসল করে হাঁসের দল। যেনো ডোবার পানি জমে আছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তাটির এমন বেহাল দশা। চলাচল করতে পারেন না এলাকাবাসী। আর তাই তো বৃষ্টি হলেই গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক নেমে আসে।
উপজেলা সদর থেকে খুব কাছে হলেও রাস্তাটির বর্তমান অবস্থা অনেক অনেক দিন আগের মতোই। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বাসুদেবপুর ইউনিয়নের অধীন এই গ্রামের পরিস্থিতি রীতিমতো শোচনীয় এবং প্রাচীনতুল্য। কারণ শুধু ওই রাস্তাটাই। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে উত্তরে চলে যাওয়া কাঁচা এই রাস্তায় পা রাখলেই বোঝা যায়, এর সংষ্কার হয়নি বহুদিন। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অনেক দিন আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাস্তাটির শুরুর অংশের ১০০ গজের মতো ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র। ওই ইটগুলো উঠে গেছে। বর্ষাকালে পুরো রাস্তায় পানি-কাদার মাখামাখি। একটু অসাবধান হলেই পা পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা। দুর্ঘটনায় পড়েনও অনেকে। ক’দিন আগেই স্কুলে যাওয়ার পথে পা ভেঙেছে এক ছাত্রী।
গ্রামের ফার্ণিচার ব্যবসায়ী মোর্ত্তজা আলী অভিযোগ করেন, প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাঁচা রাস্তায় প্রায় সময় পানি জমে থাকে। তা মাড়িয়েই গ্রামের মানুষের চলাচল। ১৯৭২ সালের দিকে এলাকাটি পুরোটাই ছিল বনজঙ্গল। সেসময় সাবের আলী নামে জনৈক ব্যক্তি গ্রামে প্রথম বাড়ি করেন। এরপর একটি দুটি করে কয়েকটি গ্রাম গড়ে ওঠে সেখানে। তারপর গ্রামের ভেতর দিয়ে চলাচলের জন্য তৈরি হয় এই রাস্তা। এরপর থেকেই রাস্তাটির এই দশা। গ্রামের অটোরিকশা চালক বিষু বললেন, তিনি ঋণ করে অটোরিকশা কিনেছেন। প্রতি সপ্তাহে দুই হাজার টাকা কিস্তি। কিন্তু বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই তার গাড়ি বাড়িতে। বৃষ্টির পানি আর কাদায় রাস্তাটি গাড়ি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় তিনি অটোরিকশা বের করতে পারেননি। এখন কিস্তি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
স্কুল শিক্ষক হুমায়ন কবীর তার কথায় সায় দিয়ে বললেন, গ্রামে কয়েকজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও আছে। তারা হুইল চেয়ারে চড়ে স্কুলে যায়। কিন্তু বর্তমানে তারাও স্কুলে যেতে পারছেন না। এর বাইরে কাদার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই স্কুলে যেতে চাইছে না। গ্রামের এক ব্যবসায়ী বললেন, ২০০৮ সালের দিকে স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী গ্রামে গিয়ে রাস্তাটি পাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তাটি পাকা হয়নি আজও। সৌদি প্রবাসী মোতালেব হোসেন বললেন, রাস্তা পাকা করার জন্য এলজিইডিতে বহু আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। আর একটু বৃষ্টি হলেই তাদের গ্রাম থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। এখন বৃষ্টি এলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামের মানুষ।
রাস্তাটির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাক হোসেন জোয়াদার বলেন, রাস্তা পাকাকরণের প্রাথমিক তালিকায় ফরিদপুরের রাস্তাটিও ছিলো। সেটি তিন বছর আগের তালিকা। ওই সময় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) তাদের গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় রাস্তাটিকে স্থান দেয়। এরপর আলোচনা করে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য তাদেরকেই দিয়ে দেয়া হয়। জানতে চাইলে বিএমডিএ জোন-১ (গোদাগাড়ী) এর সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ জিল্লুর বারী বলেন, যাচাই-বাছাই করে চার বছর মেয়াদী গ্রামীণ যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক তালিকায় ওই রাস্তাটিকেও স্থান দেয়া হয়। কিন্তু নীতিনির্ধারক মহলের আলাদা পছন্দ থাকায় চুড়ান্ত তালিকায় এই রাস্তাটির কাজ আটকে যায়। আবার নতুন প্রকল্প শুরু না হলে রাস্তাটিও পাকা হচ্ছেনা, এমনটিই জানিয়েছেন তিনি। তবে ফরিদপুর-মাধবপুর গ্রামবাসীর প্রাণের দাবি, রাস্তাটি পাকা করে হাজারো মানুষের দুর্ভোগ দুর করা হোক।