দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ জুন: ভেজাল খাবারের বিষয়ে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না যে যত শক্তিশালীই হোক না কেন শাস্তির আওতায় আনা হবে সবাইকে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।বৃহস্পতিবার সকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।তবে শুধুমাত্র অভিযান পরিচালনা করেই ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব নয় এ কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী এ বিষয়ে ক্রেতা বিক্রেতা সকলকেই সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই গৃহিত কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।ভেজাল খাবারের বিষয়ে এবার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে রমজান মাসজুড়ে ভেজালবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হবে।আমু বলেন, যখন-তখন, যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গায় আকস্মিক অভিযান চলবে। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত থেকে বড় কারখানা সবখানেই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, ইফতার ও সেহরীতে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয় এমন ৩০টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, ভেজাল খাবার দিয়ে যে ব্যবসায়ী ক্ষতি করছে সে এবং তার পরিবারও ক্ষতির মুখে পড়তে পাওে ব্যবসায়ীরা এভাবে ভাবলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পবিত্র রমজান মাসে ভোক্তা পর্যায়ে ভেজালমুক্ত খাদ্য-পানীয় ও পণ্যসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস এন্ড টেষ্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) যখন-তখন, যেখানে-সেখানে অভিযান পরিচালনা ও মান পরীক্ষা করবে।শিল্পমন্ত্রী বলেন, অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন্ ফ্যাক্টরি বা প্রতিষ্ঠানটি কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তির বা পরিবারের- তা বিবেচনায় আনা হবে না।তিনি বলেন, এমনকি রাস্তার পাশে যে সরবত ও খাবার বিক্রি হয়, সেখানেও অভিযান পরিচালনা ও মান পরীক্ষা করা হবে।রমজানের পবিত্রতা রক্ষার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী-বিক্রেতাগণ ভেজাল বা নি¤œমানের খাদ্যপণ্য ও পানীয় প্রস্তুত এবং বিপণন থেকে যাতে বিরত থাকে, সে লক্ষ্যে বিএসটিআই ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ৪টি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।তিনি বলেন, রাজধানীর পাশাপাশি এ সময় সারা দেশে বিএসটিআই’র আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে এ ধরনের ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে।রোজাদারগণ সচরাচর যে সকল খাদ্য ও পানীয় অধিক গ্রহণ করে থাকেন অভিযানগুলোতে সে সকল খাদ্যসামগ্রী বেশি পরীক্ষা করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যেমন-মুড়ি, খেজুর, কলা, হালকা পানীয়, পাউডার, ফ্রুটজুস, ভোজ্যতেল, ঘি, নুডুলস, লাচ্ছা সেমাই, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট ইত্যাদির উপর সরকারের বিশেষ নজর থাকবে।তিনি বলেন, ইফতার ও সেহরীতে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়- এমন ৩০টি পণ্যের নমুনাও ইতোমধ্যে বাজার থেকে সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং থাকবে।বিএসটিআই দ্বারা গত সাড়ে ১১মাসে নি¤œমান ও ভেজালবিরোধী অভিযানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এ সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সংখ্যা ৭৫৫টি এবং এতে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১ হাজার ১০৫টি। সব ক’টি মামলা নিস্পত্তিও করা হয়েছে। একই সময়ে সার্ভিল্যান্স টিম পরিচালনা করা হয়েছে ৬১২টি এবং এ টিম ১৬১টি মামলা করেছে।
তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫শ’ টাকা। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে ৫১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেছে।শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিএসটিআই শুধু রমজানেই নয়, সারাবছরই দেশব্যাপী নকল ও ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবে ভেজাল ও নকল পণ্য তৈরির প্রবণতা দূর করতে হলে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ভেজালের সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিদের নৈতিকতা ও চিন্তা চেতনার পরিশুদ্ধতার প্রয়োজন রয়েছে। সে সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে মানসম্মত খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি। আর এই উভয় ক্ষেত্রেই সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি গণমাধ্যম একটি বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন,কোথাও যদি নকল ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রীর কারখানা থাকে, যা সরকারের গোচরে নেই- সে ক্ষেত্রে ভোক্তাগণ যদি তা বিএসটিআইকে ফোন করে বা ¯’ানীয় থানায় জানায়, তাহলে সরকারের মোবাইল টিম সেখানে অভিযান পরিচালনা করবে।ভেজালবিরোধী অভিযানে মন্ত্রী দেশবাসীকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিল্প সচিব মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ইকরামুল হক, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুষেণ চন্দ্র দাসসহ মন্ত্রণালয় ও বিএসটিআইয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।