দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ জুন: তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে সিলেটের নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতিতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কথা বলেন।স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সংগঠন অত্যন্ত দরকারি। সংগঠনটা সাংগঠনিকভাবে যেন গড়ে ওঠে সেদিকে নজর দেবেন।প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সিলেট বিমানবন্দরে নামে।
সকাল ১০টা ৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-০১৬(বোয়িং-৭৭৭) উড়োজাহাজটি সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সোয়া ১০টায় ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া, সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা হকসহ শীর্ষ নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে প্রধানমন্ত্রীকে বেলা ১১টা ৮ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে বিমানে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১১টা ৪৩ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে।ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সিলেটে প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতির সময় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। এ সময় দেশবাসীকে রোজার শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করা দরকার। যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।সিলেটে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহউদ্দিন সিরাজ।তিনি ভারতের স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন অর্জনের জন্য শেখ হাসিনাকে রোজার পর সিলেটে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা বললে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবর্ধনা দিতে হলে দিতে হবে তিন কন্যাকে।ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।সিলেটের রুশনারা আলী, পাবনার রূপা হক এবং টিউলিপ- এই তিন কন্যা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।সম্প্রতি ব্রিটেনের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকসহ এই তিন বাঙালি পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।
টিউলিপের নির্বাচনের সময় সিলেটবাসীর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টিউলিপকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানাতে পেরেছি। তার ভাষণ শুনতে পার্লামেন্টে গেছি। সত্যিই এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি সত্যিই টিউলিপের জন্য গর্বিত। আপনারা প্রত্যেকে তার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন।লন্ডন সফরকালে গত মঙ্গলবার হাউজ অফ কমন্সে টিউলিপের প্রথম বক্তৃতা শোনেন খালা শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চালু করতে সম্প্রতি ভুটানে স্বাক্ষরিত যোগযোগ চুক্তির কথা উল্লেখ কওে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এখন বাংলাদেশ থেকে ভুটানে, নেপালে গাড়িতে যাওয়া যাবে। আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।স্থলসীমান্ত চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৭৫-এর পর অনেক সরকারই ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু এ ব্যাপারে কেউই উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারও কোনো কথা বলে নাই।অন্যদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার চেয়াম্যান আশফাক আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার আগে পুরোনো বিল্ডিং ভেঙে নতুন নাম লাগানো ছাড়া সিলেটের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। কেবল নেমপ্লেটের উন্নয়ন ছিল। যদিও সিলেটে যুগ যুগ ধরে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সিলেটে উন্নয়ন হয়েছে।
শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সভাপতিত্ব করেন। উপস্থাপনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা, রেল স্টেশন আধুনিক করা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, ঢাকা-সিলেটের যোগাযোগ সবগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের করা। এমনকি সিলেটে কোনো ক্যান্টনমেন্ট ছিল না। আমরা এখানে আলাদা একটা ডিভিশনও করে দিয়েছি। এটা হওয়ার পরে সিলেটের নিরাপত্তা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং কার্যকলাপ আরো ত্বরান্বিত হবে। এভাবে সারাদেশেই আমরা প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে চায়। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই সিলেট।এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সবসময় সচেতন এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা দোয়া করবেন যাতে আমরা সবসময় এসব কাজ করে যেতে পারি।আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠন যেনো সাংগঠনিকভাবে সুন্দর হয়ে গড়ে ওঠে সেইদিকে নজর দেবেন। দেশবাসীকে রোজার শুভেচ্ছাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, হিথ্রো থেকে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট সিলেটে নামার উদ্যোগ আমিই প্রথম নিয়েছিলাম এবং বাস্তবায়ন করেছি। তাই আমি যখন এটা বাস্তবায়ন করলাম তখন এটার ব্যতিক্রম কীভাবে করি, এজন্য সুযোগ পেয়েই নেমে গেলাম।প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী সিলেটবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, টিউলিপের জন্য প্রত্যেক সিলেটবাসী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে গেছে, অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে কারণে এই পরিশ্রমের ফসল পাওয়া গেছে। টিউলিপ ১ হাজার বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই আমরা জানি যে দেশের কোথায় কী করতে হবে। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন হয়তো এসব কাজ অনেক আগেই হয়ে যেত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই উদ্যোগ আর কেউ হাতে নেয়নি। জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার, খালেদা সরকার মাঝখানে কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কোনো সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যো গ্রহণ করেনি। এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়।
বঙ্গবন্ধুর মেয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু যে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন তা নয়, স্বাধীনতা অর্জন, অর্জন-পরবর্তী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে তৈরি হবে, কোথায় কী কী কাজ করতে হবে সবকিছু তিনি করে দিয়ে গেছেন। শুধু বাস্তবায়ন করাটাই বাকি ছিল।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় আসার পরেই এই কাজগুলো হাতে নিয়েছে এবং উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে। সমুদ্রসীমা আমরা পেয়েছি, স্থলসীমান্ত চুক্তিও আমরা বাস্তবায়ন করেছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্ক না রাখা। সেই নীতিতে আমরা অবিচল থেকেই একেক করে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পেরেছি।
ভারতের ৫৪টি নদী বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত। এসব নদীগুলোর সমস্যা সমাধানে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। এটার দাবিদার আপনারা সবাই, প্রবাসী বাংলাদেশি থেকে শুরু করে প্রত্যেকে এতে অবদান রেখেছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে, মানুষ হত্যা, গণহত্যার বিচার ইতোমধ্যে আমরা করে যাচ্ছি।এটা না করলে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে না। বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করা এটাই আমাদের কাজ।