দৈনিকবার্তা-খুলনা, ১৮ জুন: ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪’শ ২২ কোটি ৬০লাখ ৭৫ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে এ বাজেট ঘোষণা করেন।প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি ৫৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা এবং সরকারি অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৫ কোটি ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। একই সাথে সিটি মেয়র ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ২৭৪ কোটি ৩২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও ঘোষণা করেন।
সিটি মেয়র ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটকে উন্নয়নমুখী বাজেট হিসেবে উল্লেখ করে জানান,এ বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঘোষিত বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সহ সামাজিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাজেটে কেসিসি’র ভৌত অবকাঠামোরও ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে।এ বাজেটে নতুন কোন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়নি।
বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক বর্ণনা করে সিটি মেয়র বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসি’র ২টি অনুমোদিত প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর থোক বরাদ্দ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ কোটি ৭০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। উক্ত থোক বরাদ্দ হতে পূর্ত খাতে ২৩ কোটি ৪৪ লক্ষ, ভেটেরিনারী খাতে ১০ লক্ষ,
জনস্বাস্থ্য খাতে ৫ কোটি ৮০ লক্ষ, কঞ্জারভেন্সী খাতে ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ ৬০ হাজার এবং বিশেষ প্রয়োজনে জরুরী পানি খাতে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় অপ্রতুল হওয়া সত্বেও অফিস পরিচালনার দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করে রাজস্ব তহবিল হতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে ৪৯ কোটি ৮০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থার ৭টি অনুমোদিত প্রকল্পে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২’শ ১৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সিটি মেয়র বলেন, খুলনা মহানগরীকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (কেএফডব্লিউ), এফএও সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতা কামনা করা হয়। তারা আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। তাদের অর্থায়নে ‘নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্পে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড প্রকল্পে ৫১ কোটি, আরবান পাবলিক এন্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ৫০ কোটি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও কেএফডব্লিউ সহায়তাপুষ্ট নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি, ফুড সেফটি প্রোগ্রাম প্রকল্পে ১৫ লক্ষ, বাংলাদেশ দক্ষিণ অঞ্চল শহরকেন্দ্রের দারিদ্র বান্ধব ও বাজার ভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ৩২ কোটি ও আরবান ম্যানেজমেন্ট অব ইন্টারনাল মাইগ্রেশন ডিউ টু ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন খুলনা সিটি কর্পোশেন’ প্রকল্পে ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট ঘোষণায় মেয়র জানান, খুলনা মহানগরীকে আধুনিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের নিকট বেশকিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ১ম ৫টি প্রকল্প সরকারের সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সরকারি অনুদান পেলে প্রকল্পগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনা মহানগরীর উন্নয়নের জন্য এ বাজেট ঘোষণার পরিসর ক্ষুদ্র হলেও এর সুদূর প্রসারী তাৎপর্য রয়েছে। এ বাজেট খুলনা মহানগরীর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রচনা করবে।
মহানগরবাসীর স্বাচছন্দ ও স্বস্তি নিশ্চিত করবে।এছাড়া বাজেটে বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর হাল-নাগাদ করধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখাহবে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং রেল ক্রসিং-এ ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মহানগরীর উন্নয়ন, শ্রীবর্ধন এবং মানুষের স্বাচ্ছন্দ ও স্বস্তির জন্য আগামীতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া বাজেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ বসতবাড়ীর হোল্ডিং ট্যাক্স পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়েছে।কেসিসি’র অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মোঃ গাউসুল আযমের সভাপতিত্বে বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে কেসিসি’র প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা সহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।