দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জুন: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, গত ছয়-সাত বছরে আড়াই গুণ শিক্ষার্থী বেড়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৫ কোটি ৫২ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই নিয়ে আমাদের শিক্ষা পরিবার। সেই পরিবারের উন্নয়নের জন্য বাজেটের ১০ শতাংশও নেই। এ বাজেট অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য।
বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে সদস্যদের সন্তানদের বৃত্তি ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।অনুষ্ঠানে পিএসসিতে ২৫ জন ও জেএসসিতে ১৭ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ২ হাজার টাকা বৃত্তি দেয়া হয়।ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন আরিফুর রহমান। বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন ও যুগ্ম-সম্পাদক ফেরদাউস মোবারক। অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, ডিআইজে’র সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক ও মধূসুদন দত্ত।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার গুণমান বৃদ্ধি করাটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে এটা একদিনে হবে না, এর জন্য সময় লাগবে। সে সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের দিতে হবে। আমরা নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চাই। শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে তাদের মাথা ভরতে চাই না, তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত হাজার মামলা রয়েছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কারণ, বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। তারা অনেক নিয়মনীতিই মানতে চাই না। যেমন- আমরা ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নিয়ম করলাম। কিন্তু নটরডেম কলেজ আদালতে রিট করে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। আমাদের ওপর সাড়ে ৭ হাজার মামলা রয়েছে। আমরা মামলাগুলোতে জিততেও পারি না। আমাদের অর্থ ও জনবল উভয়েরই সঙ্কট রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতবছর শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এ দুই মন্ত্রণালয় মিলে বাজেটের ১১ ভাগ বারাদ্দ দেয়া হলেও এবার (২০১৫-১৬ অর্থবছর) দেয়া হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ভাগ।এদিকে, বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেট-বরাদ্দ কমছে। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ একেবারেই কম। শিক্ষা খাতের এই বরাদ্দ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। এ জন্য এই খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ১৪ শতাংশ। এবার তা কমে হয়েছে ১০ শতাংশের কিছুটা বেশি। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভারত ও পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করার দাবি জানান মাকসুদ কামাল।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, গতবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এবার তা কমে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে এসেছে।শিক্ষা খাতের বর্তমান বাজেট দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়াজ আহমেদ খান, একই বিভাগের শিক্ষক তৈয়েবুর রহমান। বক্তারা শিক্ষা খাতে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।