দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জুন: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় হাজিরা দিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা আলিয়ার বিশেষ আদলতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷বুধবার দুপুরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷তিনি জানান, যথাসময়ে খালেদা জিয়া ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদের আদালতে হাজির হবেন৷উল্লেখ্য, গত ২৫ মে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির দুই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ জুন দিন ধার্য করেছিলেন আদালত৷
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির প্রধান আসামি তিনি৷বুধবার দুপুর ১২টায়এ তথ্য নিশ্চিত করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া৷জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে৷বৃহস্পতিবার মামলা দু’টিরই বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে৷ হারুন-অর-রশিদ গত ২৫ মে পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে৷ তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার সাক্ষ্য নেওয়ার দিনগুলোতে খালেদা জিয়া অনুপস্থিত থাকায় এ সাক্ষ্যগ্রহণ আইনানুগ হয়নি উল্লেখ করে হাইকোর্টে তা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন জানিয়েছেন খালেদার আইনজীবীরা৷জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষীর অন্য ছয়জন হচ্ছেন- সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার হারুনুর রশিদ, অফিসার (ক্যাশ) শফিউদ্দিন মিয়া, আবুল খায়ের, প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দা নাজমা পারভীন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন৷
এসব সাক্ষীরাও বৃহস্পতিবার আদালতে থাকবেন৷ দুই মামলায়ই হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হলে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল৷জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন৷ খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷ আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন৷
অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন৷ খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তত্কালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডবি্লউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷
জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন৷ হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক৷ এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়৷অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়৷দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তত্কালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান৷জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়৷ কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উত্স ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি৷জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে৷