দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ১৭ জুন: নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও সাধারন শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নারীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের বাইরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হামলার জন্য কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর ছাত্রলীগের দাবী কিছুদিন আগে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের দুইকর্মীকে ক্যাম্পাস থেকে মাদকসহ পুলিশের সোপর্দ করার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।প্রত্যক্ষদর্শী সাধারন শিক্ষার্থীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বামপন্থী ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট এবং ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ৩০/৪০ জন নেতাকর্মী কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন এবং বিভিন্ন দাবীতে শ্লোগান দিতে থাকেন। এসময় কলেজের অভ্যন্তরে অভিভাবক প্রতিনিধি সভা চলছিল এবং পরীক্ষার কারণে প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। এক পর্যায়ে কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা সেখানে গেলে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতৃবৃন্দ প্রধান ফটক খুলে দেয়ার দাবী জানান।
এসময় কয়েকজন শিক্ষক বহিরাগতরা কলেজে প্রবেশ করতে পারবে না বললে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কয়েকজন শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে সাধারন শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে তাদের উপর চড়াও হয়। ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীও সাধারন শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সংঘর্ষে আহতদের শহরের ৩শ’শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়া হয়।এব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মৈত্রী ঘোষ বলেন, সকালে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারি তোলারাম কলেজে স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াদসহ আরও কয়েকজন জোটের মিছিলের পিছন থেকে কাঠ, বাঁশ, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলার সময় পুলিশ গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো থাকলেও ছাত্রলীগের কর্মীদের বাধা না দিয়ে উল্টো জোটের কর্মীদের মারতে যায়।
মৈত্রী ঘোষ জানান, তিনিসহ হামলায় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক জাহিদ সুজন, জেলা সমাজতান্ত্রীক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক সজল বারৈ, ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল বাপ্পী, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেতু আক্তার, সোহেলী, শাওনসহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ মুঠোফোনে বলেন, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায়কে স্বাগত জানিয়ে ও জামায়াতের হরতালের বিরুদ্ধে সকালে ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। ওই সময়ে ছাত্রজোটের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা কলেজের মূল গেট বন্ধ থাকায় ধাক্কাধাক্কি করলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা সেখানে গেলে তাদের সাথে অসদ্বাচরন শুরু করলে সাধারন শিক্ষার্থীরা ঐঘটনার প্রতিবাদ করে।রিয়াদ দাবী করেন, গত ১জুন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সাদ্দাম হোসেন(অনার্স ৪র্থ বর্ষ) ও ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী মাহমুদুল নবী(এইচএসসি ২য় বর্ষ) নামের দুইজনকে পেথিডিনসহ পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা নিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা কলেজ ক্যাম্পাসে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টায় ছিল।
এব্যপারে কলেজের অধ্যক্ষ প্রভাত চন্দ্র দত্ত জানান, সকালে কলেজের অভ্যন্তরে অভিভাবকদেও নিয়ে মতবিনিময় চলছিল এবং দুটি পরীক্ষা থাকায় প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। হঠাৎ প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে নেতাকর্মীরা কলেজের প্রধান ফটকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমিসহ শিক্ষকরা সেখানে যাই। তারা জানায় যে স্মারকলিপি দিতে এসেছে। এসময় আমরা তাদেরকে সেখানেই স্মারকলিপিটি দিতে বলি। যেহেতু পরীক্ষা চলছে তাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা ঠিক হবেনা তাদেরকে জানানো হয়।ঘটনাস্থলে থানা ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা জানান, কলেজের সামনে ছাত্রলীগ হরতালবিরোধী মিছিল বের করে আর একই সময়ে বাম দলের কিছু লোকজনও মিছিল বের করে। তখন তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।