দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জুন: নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদনের রায় জানা যাবে বৃহস্পতিবার৷দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এই মামলা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২৮ মে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছিল৷এই বেঞ্চের বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় বিষয়টি রায়ের জন্য রাখা হয়েছে৷হাই কোর্টে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও রাগীব রউফ চৌধুরী৷ তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান৷ অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান৷ সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে দুদক৷ পরের বছর ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়৷
এতে অভিযোগ করা হয়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন৷খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই দুর্নীতির এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল৷প্রায় সাত বছর পর চলতি বছর শুরুতে রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক৷ খালেদার আবেদনে রুলের ওপর শুনানি শুরু হয় ১৯ এপ্রিল৷রাগীব রউফ শুনানিতে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এ মামলায় নেই৷তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে না৷ একই ঘটনা থেকে উদ্ভূত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা খারিজ হয়েছে৷ খালেদা জিয়ার মামলাও চলতে পারে না৷অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, নাইকো মামলায় অপরাধ সংগঠনের যথেষ্ট প্রাথমিক উপাদান রয়েছে৷ তাছাড়া শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুই মামলার মধ্যেও তফাত্ আছে৷
এদিকে,বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি শেষ হয়েছে৷ যেকোনো দিন দেওয়া হবে বলে জানিয়ে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) করেছেন হাইকোর্ট৷বুধবার দুপুরে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি শেষ হয়৷ গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল৷ দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান৷
ওইদিন গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি পেছাতে খালেদার চারটি সময়ের আবেদন খারিজ করে প্রথমে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি নেওয়া শুরু করেছিলেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ৷ পরে বিচারপতি জাফর আহমেদের পরিবর্তে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল নিষ্পত্তি করতে বিচারপতি আব্দুর রবকে এ বেঞ্চে দেওয়া হয়৷
এদিকে বিচারপতি মো.নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) নাইকো দুর্নীতি মামলার রুলের রায় দেবেন৷বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানিও এ বেঞ্চে চলবে৷ গত ৯ এপ্রিল এ মামলাটির কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন একই আদালত৷ গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল৷ মামলাগুলোর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি এর আগেও একবার শেষ হওয়ায় রায়ের দিন গত ৫ এপ্রিল ধার্য ছিল বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে৷ এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছিল৷ অন্যদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি শুরুর অপেক্ষায় ছিল৷তার আগেই এসব মামলার বেঞ্চ পরিবর্তনে গত ২ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া৷ তার আইনজীবীদের এ সংক্রান্ত চারটি আবেদন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা৷ ফলে ৫ এপ্রিল পূর্ববর্তী স্ব স্ব হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাগুলোর বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন৷এরপর মামলা তিনটির রুল নিষ্পত্তির জন্য গত ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)৷ ফলে নতুন করে রুল শুনানির কার্যক্রম শুরু হয়৷খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এসব মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল৷ সমপ্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল শুনানির দিন ধাযের্র আবেদন জানায় দুদক৷এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া৷
ঢাকা ও চট্টগ্রামে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক৷মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়৷এ মামলায় ২০০৮ সালের ১০ জুলাই খালেদা জিয়া, সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় দুদক৷ এরপর চার্জশিটভুক্ত আসামি খালেদা জিয়াসহ আসামিদের কয়েকজন ওই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন৷এর মধ্যে খালেদা জিয়ার করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০০৭ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন৷ পরে বেশ কয়েক দফায় মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাড়ান আদালত৷