দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জুন: রাজধানীতে বন্দুকের গুলিতে দু’জন নিহতের ঘটনায় এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জবানবন্দী দিয়েছেন। বুধবার দুপুর ৩টায় ঢাকা মহানগর হাকিম আমিনুল হকের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এরপর আধাঘণ্টা তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।বখতিয়ার আলম রনিমহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ও সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে।১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে তাতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। ওই ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে ১৫ এপ্রিল রাতে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সময় বখতিয়ারের গাড়ির পেছনের আসনে ছিলেন কামালসহ দুই বন্ধু। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেফতার করে।২৪ মে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি)। তদন্তভার পাওয়ার পর ৩১ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে ডিবি পুলিশ।রনির আইনজীবী এ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু মঙ্গলবার জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আমিনুল হক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
ইস্কাটনে জোড়া খুনের সময় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির সঙ্গে গাড়িতেই ছিলেন বন্ধু কামাল মাহমুদ। এরপর তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার মহানগর হাকিম আমিনুল হকের খাস কামরায় জবানবন্দি দেন তিনি। সেখানেই তিনি এ কথা জানান বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।এদিকে এ ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাডো গাড়িটি জিম্মায় নিতে আবেদন করা হয়েছে। বখতিয়ারের মা সরকারদলীয় সাংসদ পিনু খানের পক্ষে তানভীর আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আজ আবেদনটি করেন। আদালত পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে গাড়ির মালিকানা সংক্রান্তপ পতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। গত রোববার গাড়িটি জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে ওই গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে রিকশাচালক ও জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালককে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় বখতিয়ারের গাড়ির পেছনের আসনে ছিলেন কামালসহ দুই বন্ধু। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেপ্তার করে। দুপুর তিনটার দিকে কামালকে আদালতে নিয়ে আসেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এরপর তিনি বিচারকের সামনে জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র আরও জানায়, কামাল বলেছেন, বখতিয়ার ও তিনি বন্ধু। ঘটনার দিন তাঁরা ওই গাড়িতে (জব্দ) করে ঘুরে বেড়িয়েছেন।বখতিয়ারকে দায়ী করে গাড়িচালক ইমরান ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইস্কাটনে যানজটে আটকা পড়ে নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করে গাড়ির জানালা দিয়ে এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন।
বখতিয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, ওই রাতে তাঁরা প্রথমে বাংলামোটরের একটি বারে যান। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ে যান। সেখান থেকে বখতিয়ার তাঁর গাড়িতে করে মগবাজারে নামিয়ে দেন জাহাঙ্গীরকে। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে বাংলামোটর হয়ে হাতিরপুলে যান। নিউ ইস্কাটনে রাত পৌনে দুইটায় যানজটে পড়লে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। তখন তিনি চালকের পাশের আসনে বসে ছিলেন। আর পেছনের আসনে ছিলেন কামালসহ দুই বন্ধু। এরপর হাতিরপুলের বাসার সামনে কামালকে এবং অন্যজনকে আরেক স্থানে নামিয়ে ধানমন্ডির বাসায় ফেরেন তিনি।