দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জুন: আবারও একেবারে কাছাকাছি এসে জয় বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে শক্তিশালি তাজিকিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ ফুটবল খেলেও শেষ মুহূর্তের ভূলে জয় পাওয়া হলো না। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করে তাজিকদের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিলো মামুনুলরা।প্রথমার্ধে দুর্দান্ত লড়াই। যেখানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। দ্বিতীয়ার্ধের ৫০ মিনিটে এমিলির গোলে বাংলাদেশের লিড। যা টিকে থাকল ৮৭ মিনিট পর্যইন্ত। জয় পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এমন রোমাঞ্চ যখন তুঙ্গে, তখনই সর্বনাশ। ফ্রি কিক থেকে ফাতখুল্লো ফাখতুলভের গোল। গোলররক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন ঝাঁপিয়ে পড়েও বলটি ঠেকাতে পারলেন না।জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়ে মঙ্গলবার তাজিকিস্তানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ।
এমন ফল বাংলাদেশের জন্য খুব খারাপ না হলেও চরম আফসোসের। কারণ দ্বিতীয়ার্ধে ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে তাজিকিস্তানকে। অথচ সেই সুযোগটাই নিতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো ইনজুরি টাইমে গোলরক্ষক রাসেল একটি নিশ্চিত গোল না বাঁচাতে পারলে পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো মামুনুলদের।তারপরও দিন শেষে স্বস্তি পেতেই পারে বাংলাদেশ শিবির। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে গত ১১ জুন কিরগিজস্তানের সঙ্গে ৩-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। যারা ছিল বাংলাদেশের চেয়ে র্যাংকিংয়ে ১১ ধাপ পিছিয়ে (১৭৭)। এবার তাজিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ করল ড্র। যে তাজিকিস্তান র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ২৭ ধাপ।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই আক্রমণের সূচনা। জামাল ভুঁইয়ার ক্রসে দুর্দান্ত হেড করেন জুয়েল রানা। তবে দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। বল চলে যায় পোস্টের খুব কাছ ঘেঁষে। ২১ মিনিটে আক্রমণে যায় তাজিকিস্তান। গোল প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। তবে ডিফেন্ডার ইয়াসিনের অসাধারণ দক্ষতায় এ যাত্রায় বেচে যায় বাংলাদেশ।২৫ মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি ফ্রি কিক পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে এমিলির নেয়া শট চলে যায় তাজিকিস্তানের গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। ২৭ মিনিটে কর্ণার কিকে গোল পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু রায়হান সুবিধামতো হেড নিতে পারেনি বলে বেঁচে যায় তাজিকিস্তান।
৩৩ মিনিটে মনে রাখার মতো হেমন্তর আক্রমণ। মাঝ মাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় ক্ষিপ্রগতিতে তাজিকদের রক্ষণে ঢুকে পড়েন হেমন্ত। তবে তার নেয়া শট ফিরে আসে প্রতিপক্ষেরে এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে।দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে তাজিকিস্তান। তবে ৫০ মিনিটে ফ্রি কিকের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। আর তাতেই পুরো গ্যালারীতে উচ্ছাস বয়ে যায়। মামুনুলের বাঁকানো ফ্রি কিকে মাথা ছোঁয়ান হেমন্ত। তাতে গোলই মনে হয়েছিল। তবে ফিনিশিং টাচটা দেন জাহিদ হাসান এমিলিই। দুর্দান্ত বেঙ্গল টাইগার্স। ১-০-তে লিড নিয়ে নেয় মামুনুল শিবির।৬২ মিনিটে বিপজ্জনক আক্রমণ করেছিল তাজিকিস্তান। ভাসিয়েভের দুর্দান্ত ক্রসে বক্সের মধ্যে দারুণ হেড নিয়েছিলেন তাজিক ফরোয়ার্ড জালিলোভ। তবে বল ড্রপ খেয়ে চলে যায় পোস্টের উপর দিয়ে। রক্ষা পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।
৬৭ মিনিটে অঘটনের শিকার তাজিকরা। দ্বিতী হলুদ কার্ড (প্লাস লাল কার্ড) দেখে মাঠ ছাড়েন তাজিকিস্তানের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আসোরভ সিওভুস। হেমন্তকে অবৈধভাবে ট্যাকল করায় কোরিয়ান রেফারি লি মিন হু দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখান আসোরভকে। ফলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় তাজিক শিবির।এই সুযোগ কাজ লাগাতে মরিয়া ছিল বাংলাদেশ শিবির। ৬৯ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। ডান প্রান্ত থেকে জুয়েল রানার ক্রসে সময় নিয়ে দারুণ হেড করেছিলেন এমিলি। কিন্তু টার্গেট ঠিক না করে হেড করলে যা হওয়ার তাই হলো, লক্ষ্যভ্রস্ট!৭৫ মিনিটেও এমিলির একটি শট চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। যা দুর্ভাগ্যই ছিল বাংলাদেশের জন্য। এর খেসারতই পরে দিয়েছে ক্রুইফ বাহিনী।
চিরাচরিত সেট পিস থেকে গোল হজম। শেষ মুহুর্তে জয় বঞ্চিত। ৮৭ মিনিটে দুর্দান্ত ফ্রি কিকে বাংলাদেশের জাল কাপান তাজিকিস্তানের মিডফিল্ডার ফাখতুলোভ ফাখতুল্লো। ম্যাচে সমতা আসে ১-১ ব্যবধানে। শেষ অবধি আর কোন গোল হয়নি। জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও ড্রয়ের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। হেড টু হেডে অনেক এগিয়েছিল তাজিকিস্তান। এর আগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ছয়বার। তাতে তাজিকদের জয় চারটি, বাংলাদেশের একটি। বাকিটা ড্র। এর মধ্যে চারটি ম্যাচ ছিল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে, বাকি দুই ম্যাচ প্রীতি।