দৈনিকবার্তা-নীলফামারী, ১৬ জুন: তিস্তায় পানি বিপদ সীমার প্রায় ১০-১২ সেঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আতঙ্ক কমেনি তিস্তাপাড়ের গ্রামগুলিতে। রাত হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে তিস্তা পাড়ে। উজানের ঢল কিছুটা কমলেও ফুলে ফেঁপে থাকা তিস্তা রাক্ষুসী রুপ নেয়ায় চরম আতঙ্ক নিয়ে রাত পার করছেন তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার পরিবার। বিশেষ করে নারী-শিশু ও গবাদী পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তিস্তা পাড়ে বসবাসকারীরা। গত কদিন থেকে রাত হলেই তিস্তায় হুহু করে পানি বেড়ে তিস্তার দুইকুল ছাপিয়ে গ্রামের পর গ্রাম হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার পরিবারের নারী-পুরুষ ও গবাদী পশু। গত চার দিন ধরে রাত বাড়ার সাথে সাথে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারেজ পয়েণ্টে বিপদসীমা অতিক্রম করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে রাখা হলেও তিস্তা বেষ্টিত ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অন্তত ১৫-২০টি গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার ১৫-২০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায়। তবে মজার ব্যাপার হলো, ভোর রাত থেকে তিস্তায় পানি কমতে শুরু করছে। মুহুর্তে পানি বিপদসীমার নিচে নেমে গেলেও হাটু থেকে কোমড় পানিতে আটকা পড়া মানুষ আর গবাদী পশুর দূরাবস্থার যেন শেষ নেই। ঘরের চালে, গাছের ডালে, কলার ভেলা আর মাছায় চাল-চুলো নিয়ে বানভাসীরা ঠাঁই নিলেও গবাদী পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, তিস্তার উজানে বর্ষণ কমে যাওয়ায় ঢল কমতে শুরু করলেও ভাটী এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর ছোটখাতা গ্রাম হাটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিসামত ছাতনাই চরের প্রায় চারশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলি জানায়। একই অবস্থা পুর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি-গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি-শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের ১৫-২০টি গ্রামের ১৫-২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিশছুক পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের একজন প্রকৌশলী এ প্রতিনিধিকে জানান, কোনরকম পূর্বাভাস ছাড়াই উজানের দেশ ভারত গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় রাত হলেই তিস্তা রুদ্রমূর্তি ধারন করছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তিস্তা ব্যারাজের সব গেটে খুলে রাখার পাশাপশি তিস্তার গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। অপর দিকে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ চরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। এছাড়া বানের পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তিস্তা পাড়ে। এরই মধ্যে ঝুনাগাছচাপানীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গনের খবর পাওয়া গেছে।