দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জুন: ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুধু বিড়ি-সিগারেট থেকেই ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করতে সব ধরনের বিড়ি ও সিগারেটের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফল স্বরূপ এই তামাকজাত পণ্য থেকে থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর।এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে (২০১৪-২০১৫) শুধু বিড়ি-সিগারেট খাত থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবারে প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে এই খাত থেকেই ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির ভিত্তি মূল্য ও আগের বছরগুলোর তুলনায় নিম্নমানের সিগারেটে সম্পূরক কর বাড়ানোরে প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বনিম্ন স্তরে সম্পূরক শুল্ক বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমান শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী ফিল্টার বিহীন ২৫ শলাকার করসহ প্রতি প্যাকেট বিড়ির মূল্য ৬.১৪ টাকা থেকে ৭.০৬ টাকা, ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্রতি প্যাকেট বিড়ির মূল্য করসহ ৬ টাকা ৯২ পয়সা থেকে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা এবং বিড়ির কাগজের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরুক শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে। আর তাই চলতি অর্থবছরের চাইতে এই খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব আহরণের চিন্তা করছে এনবিআর।একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছরই আমরা এনবিআরের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে সব ধরনের সিগারেটের ওপর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্য রেখে বাজেটে প্রস্তাব করি। বিড়ি-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে প্রতিবছরই এ খাতকে নিরুৎসাহিত করতে বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ও ভিত্তিমূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আগের অর্থবছরগুলোতে কমদামি সিগারেটের শুল্ক ছাড়ের কারণেই এই খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছিল না। কেননা আমাদের দেশের মানুষ কমদামি সিগারেট বেশি খায়। তাই এই বিষয়টি বিবেচনায় এনে বেশি দামির পাশাপাশি কমদামি সিগারেটের ওপরও এবার সম্পূরক কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি হারে। তাই আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নির্ধারণ করা ছিল, তার চাইতে বেশি আদায় করা সম্ভাব হবে এই খাত থেকে। আর এই লক্ষ্যেই চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি অর্থাৎ ১৮ হাজার কোটি বা তারও বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।আগে যে পরিমাণ সিগারেটের ভোক্তা ছিল, সে পরিমাণ থাকলেই বা ভোক্তা বেশিদামি সিগারেট থেকে কমদামি সিগারেটে না নামলে এই লক্ষ্যমাত্রা আদায় করা খুব সহজ হবে বলে যোগ করেন তিনি।
এদিকে অর্থমন্ত্রী এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, এটি সুবিদিত এবং সর্বজন স্বীকৃত যে, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয়ের জন্য সিগারেট অত্যন্ত ক্ষতিকর। সিগারেটের ক্ষতিকর দিক বিবেচনার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিসহ সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবসায় নিয়োজিত অন্যান্য সব করদাতা যথা: ব্যক্তি, অংশীদারি ফার্ম ইত্যাদির ওপর ৪৫ শতাংশ হারে একটি একক করহার ধার্য করার প্রস্তাব করছি।প্রসঙ্গত: এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, এর আগের অর্থবছরগুলোতে দেখা যায় ২০১১-১২ অর্থবছরে বিড়ি-সিগারেট থেকে ১০ হাজার ১৭৬ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা কমে ৯ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা হয়। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিড়ি-সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।