Jamaat-e-Islami secretary general Ali Ahsan Muhammad Mujahid-enews-DoinikBarta

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জুন, ২০১৫: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের রায় আগামীকাল ১৬ জুন ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে মুজাহিদের আপিলে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গত ২৭ মে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করে দেয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

মুজাহিদ হলেন চতুর্থ ব্যক্তি যার মামলায় আনা আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার পর্যায়ে পৌঁছালো। মুজাহিদের আপিল শুনানিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায় ও মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) পাঠ শেষ করে আসামিপক্ষ। এরপর গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মে মোট তিন কার্যদিবস আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলায় যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়। আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এডভোকেট এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

এ ছাড়াও ২৫ পৃষ্ঠার লিখিত যুক্তিও আদালতে দাখিল করেছেন এটর্নি জেনারেল। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাসস’কে বলেন, ‘মুজাহিদের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। আপিলে আসামীপক্ষের শুনানির বিপরীতে রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি পেশ করে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার আর্জি পেশ করা হয়েছে।’ এ আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকবে বলে এটর্নি জেনারেল আশা প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদন্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন মুজাহিদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৭টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করেছিল ট্রাইব্যুনাল। মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গণহত্যা, অপহরণ করে আটক রাখা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, এসব অপরাধে সহযোগিতা, প্ররোচনা, উস্কানি দেয়ার সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১ ও ৬ এবং ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেয়। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেয় তাকে। ৬ ও ৭ নং অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সুপরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) আনা হয়। মুজাহিদ একক ও দলবদ্ধভাবে সরাসরি জড়িত থেকে ও নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সহযোগিতা ও নির্দেশদানের মাধ্যমে এসব ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগে বলা হয়।

আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মোট ১৭ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছিল। অপরদিকে মুজাহিদের পক্ষে একমাত্র সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় তার ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর। এর আগে আরো ৩টি মামলা সুপ্রিম কোর্টে আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে। আপিলের প্রথম রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এর রায় রিভিউ’র আবেদনও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এরপর ওই বছর ১২ডিসেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইব্যুনালে দেয়া সাজা মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ।

আপিলের তৃতীয় রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। ফাঁসির দন্ড বহাল রাখার রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনও খারিজ করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১১ এপ্রিল শনিবার রাতে এ ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ট্রাইব্যুনালে দন্ডিতদের মধ্যে কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলো।