Bagmara Murder News 15-6-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১৫ জুন: রাজশাহীর বাগমারায় আলোচিত খয়রাবিলে জেলে আশরাফুল ইসলাম (২৮) হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। গত ১৯ মে ব্যাপক গোপনীয়তার মধ্যে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করা হয়। তবে এতে মামলার প্রধান দুই আসামি ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা সাবেক ওসি আবু ওবায়দা খাঁন বদলি হয়ে যাওয়ার আগের দিন অভিযোগপত্রটি রাজশাহী আদালতে দাখিল করে চলে যান।

এদিকে প্রধান দুই আসামিকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করার ঘটনায় বাদী ও নিহতের পরিবারের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পুলিশ প্রভাবিত হয়ে মূল দুই হোতাকে অব্যাহতি অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দিয়েছে। এ অভিযোগের বিরুদ্ধে তারা আদালতে নারাজি পিটিশন করবেন বলেও জানান।

প্রসঙ্গত, বাগমারারা খয়রার বিলের দখলকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর শ্রীপুর গ্রামের জেলে আশরাফুল ইসলামকে মাছ ধরা অবস্থায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার পর নিহত জেলের ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সহসভাপতি মকবুল হোসেন মৃধা, তাহেরপুর পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তখন থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক মামলাটি তদন্ত করে আসছিলেন। তবে গত এপ্রিল মাসে তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণের যাওয়ার পর সে সময়ের ওসি আবু ওবায়দা খাঁন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটি গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক ফিরে আসলেও মামলাটি তদন্তের জন্য তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।

বাগমারা থানা সূত্র মতে, গত ২০ মে ওসি আবু ওবায়দা খাঁন বদলি হয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনে যান। তার আগের দিন তিনি গোপনে প্রধান দুই আসামী আওয়ামীলীগের উপজেলা শাখার সহসভাপতি শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা ও আওয়ামী লীগের তাহেরপুর পৌরসভার সাধারণ সম্পাদক এবং মেয়র আবুল কালামকে বাদ দিয়ে বিএনপির দ্বীপপুর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াজেদ আলী, বিএনপি কর্মী মোবারক হোসেনসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় নতুন করে আরও ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার বাদী জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, মকবুল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে তাদের বাদ তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাদেও দুজনের নেতৃত্বেই সাধারণ জেলেদেও ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই দুই নেতা বেশকিছুদিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশকে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সেই দুই নেতাকেই বাদ দিয়ে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। বদলী হয়ে যাওয়ার আগের দিন অভিযোগপত্র দেওয়াতে ওসির তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মামলার বাদী। সেইসঙ্গে ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে নারাজি পিটিশন দিবেন বলেও জানিয়েছেন।

নিহত আশরাফুল ইসলামের বাবা জাবেদ আলীসহ মামলার কয়েকজন সাক্ষী জানান, গত দুই-তিন দিন আগে তারা ওই অভিযোগপত্রটির বিষয়ে জানতে পারেন। এর আগে ওসি তাদেও সঙ্গে কোনো প্রকার কথাও বলেননি। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর মামলাটি ওসি (আবু ওবায়দা) তদন্ত করছিলেন। তিনিই অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে অপারগতা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে তৎকালীন ওসি (বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত) আবু ওবায়দা খাঁনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাগমারা থেকে যাওয়ার আগের দিন অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মূল দুই আসামীর বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়ার পরেও কীভাবে বাদ দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্তে যা পাওয়া গেছে, তাই দেওয়া হয়েছে।’ অভিযোগপত্র থেকে বাদ যাওয়া আওয়ামীলীগের দুই নেতার সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।