5bnn

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জুনঃ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে এখোন হাজারমানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সোমবার কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও বগুড়ায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে।এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপূত্র, ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।তবে বিকল্প বাঁধের মেরামত না হওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢুকে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের বীজতলা ও সবজি বাগান। দেশের নদনদীর পানির উ্চচতা পর্যবেক্ষন করা হয় এমন ৪১ টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে এবং ৩৯ পয়েন্টে পানির উচ্চতা কমেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরন কেন্দ্র।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরন কেন্দ্র-এর এক বুলেটিনে আজ জানানো হয়, ৮৪টি পর্যবেক্ষন পয়েন্টের মধ্যে দুইটিতে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।সারিয়াকান্দিতে যমুনা, বাঘাবাড়িতে আত্রাই, সুনামগঞ্জে সুরমা এবং জারিয়াজাঞ্জাইলে কংশ যথাক্রমে বিপদসীমার- ৯ সেমি, শূন্য সেমি, ২৫ সেমি এবং ৪৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচেছ।সুরমা- কুশিয়ারা ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানি হ্রাস অব্যহত থাকবে, তবে গঙ্গা-পদ্মা ও যমুনার পানি বাড়তে পারে। পরবর্তি ৮৪ ঘন্টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনায় পানি হ্রাস অব্যহত থাকতে পারে। অন্যদিকে, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা- কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকতে পারে।আগামি ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তবে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় কিছুটা অবনতি হতে পারে। সোমবার শেরপুর ও সিলেটে সর্বোচ্চ ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে জেলার ছয়টি উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী দেড় শতাধিক চরগ্রাম ও দ্বীপচর।এসব এলাকার নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও দুর্ভোগ বেড়েছে ১০ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার পানিবন্দি মানুষের। চারিদিক পানিতে তলিয়ে থাকায় গৃহপালিত পশু খাদ্য সংকটে বিপাকে পড়েছে বন্যার্তরা।গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাগুলো এখনো পানিতে তলিয়ে থাকায় নৌকা ও কলাগাছের ভেলা দিয়েই লোকালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে বন্যার্তদের।বন্যা প্লাবিত এলাকার মানুষের জন্য কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা এখনও দুর্গতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়নি।কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার চর পার্বতীপুরের মনছের আলী (৫৫), ছকিনা বেগম (৪৫), আজিরন নেছা (৪৮) জানালেন, বাহে চাইরোপাকে পানি, কোন পাকে বেড়বার পারি না। নৌকা নাই, হাট-বাজারও যাবার পাই না। খাওয়ার খুব কষ্ট হইচে। চরের জমিগুল্যা বানের পানিত ডুবি থাকায় গরু-ছাগল নিয়া খুব সমস্যাত আছি।কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ জানান, জেলায় বন্যা কবলিতদের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে।কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, সোমবার তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের চৌহালী সদরের খাষ কাউলিয়া ব্র্যাক অফিস মোড় সংলগ্ন ব্রিজটি নদীগর্ভে বিলন হয়ে গেছে।সোমবার সকালে ব্রিজটি বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ী, আবাদি জমিসহ কোন না কোন স্থাপনা।প্রতিদিন এসব এলাকার বসতবাড়ি ও দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনার মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙন রোধে এখনও কোন কাজ শুরু করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জরুরি ভিত্তিতে এই জনপদ রক্ষায় সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।স্থানীয় স্কুল শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, কয়েকদিন ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। সোমবার সকালে এক ঘণ্টার ব্যবধানে খাস কাউলিয়া ব্র্যাক অফিস মোড়ের ব্রিজটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে চলে যায়।তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙন থেকে সাত-আটশ’ গজ দূরে রয়েছে নির্মাণাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাস কাউলিয়া সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত খাষ কাউলিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ জানান, ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে মনে হয় উপজেলার অবশিষ্ট অংশও নদীতে চলে যাবে।এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল বারী জানান, ভাঙনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে উপজেলার সব স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধে আপাতত কোন ব্যবস্থা নেওয়ার খবর তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জ: কদিনের ভারি বর্ষণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা ডিএনডি বাঁধ প্রকল্পের ভেতরে ব্যাপক জলাবদ্ধতায় বাড়ি-ঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।ডিএনডি বাঁধের ভেতরে ছোট-বড় প্রায় দুই হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন। ক্ষেত-খামারে সেচের জন্য ১৯৬৭ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ- ডেমরার বিশাল এলাকা নিয়ে চালু করা হয় ডিএনডি প্রকল্প।তবে প্রকল্পের ভেতরে শিল্প কল-কারখানা, পানি নিষ্কাষণের খাল দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ ও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় ময়লা-আবর্জনায় তা সংকীর্ণ হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেও তলিয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। ফলে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই এ প্রকল্পের মধ্যে পানি বেড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

ঘরবাড়ি, অফিস-আদালতে পানি ঢুকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানারোগ।প্রকল্পের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনডি পাম্পিং প্ল্যান্ট নতুন কওে তৈরি করতে হবে বলে জানান শিমরাইল পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার।জলাবদ্ধতা দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা এবং গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে এ তিন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার সকালে থেকে তিস্তা এবং দুপুর থেকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে।এর ফলে তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সলেডি স্প্যার-২ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা ফুলছড়ির সিংড়িয়া-রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ দুই অংশে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানিতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে নদী গুলোর পানি বাড়তে শুরু করে। হাতিবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানী পয়েন্টে রোববার দুপুরে বিপদ সীমার ১০ সেঃ মি ঃ উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে । পাউবো সুত্র জানায়, তিস্তা পাড়ের লোক জনের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ভারত গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচন্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারনা যাচ্ছে না। পানি গতি নিয়ন্ত্রন করতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটই খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার পানিতে বহুল আলোচিত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা- দহগ্রাম, হাতিবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকারসহ জেলার ২০ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের ক্ষেতসহ অনেক ফসলী ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। হাতিবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামে ভেসি বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এ বাধঁ ভেঙ্গে গেলে তিস্তার পানি হাতিবান্ধা শহরে ঢুকে পডবে। ইতোমধ্যে চর এলাকা গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। চর এলাকা গুলো থেকে খবর আসছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পানি বন্দি পরিবার গুলোর মাঝে কোন খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়নি।

সুত্র জানায়, তিস্তা পানি আরও বৃদ্ধি পেলে তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার্থে পাউবো ফ্লাড বাইপাস কেটে দিতে পারে। এ বাধঁ কেটে দিলে গোটা লালমনিরহাট জেলার লক্ষাধিক পরিবার পানি বৃন্দি হয়ে পড়বে। এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হবে। চর ধুবনীর মমতাজ আলী, কিসমত লোহালীর আবু বক্কর, পাটিকাপাড়ার রফিকুলসহ অনেক পানি বৃন্দি পরিবার অভিযোগ করেন, আমরা ২ দিন ধরে পানি বৃন্দি অবস্থায় আছি। এখন পর্যন্ত আমাদের মাঝে কোন ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। কেউ আমাদের খোঁজ পর্যন্ত করেনি। এদিকে, পানি অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাট পাটগ্রাম উপজেলার ছিটমহল আঙ্গরপোতা-দহগ্রামের চর, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, চর হলদীবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম কাশিরাম, চর বৈরাতী, শৈলমারী চর, আমিনগঞ্জ চর ও রুদ্ধেশ্বর চর, আদিতমারী উপজেলার চরগোবর্ধন, দক্ষিণ বালাপাড়া, মহিষাশহর, কুটিরপাড়, চন্ডিমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছা, কালমাটি, রাজপুর, তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে এখনো তীরবর্তী প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।এদিকে, শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। মহারশি নদীর পানি কিছুটা কমলেও নিম্নাঞ্চলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।