14.-khaleda

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জুনঃ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হারুনুর রশীদের সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে পুনরায় সাক্ষ্য নিতে হাইকোর্টের রিভিশনাল আবেদন করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে আদালতের কাছে রুল চেয়ে তার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করেছেন তিনি। সোমবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়টি রাখা হয়।খালেদার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ ফৌজদারি রিভিশন দায়ের করেন।এর আগে, ২৫ মে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশিদ সাক্ষ্য বাতিল চেয়ে আবেদন করলে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার তা খারিজ করে দিয়ে পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য ১৮ জুন দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রয়েছে। বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজের অস্থায়ী এজলাসে এ দুটি মামলার বিচার চলছে। লাগাতার অবরোধ ডেকে টানা কয়েকটি ধার্য দিনে আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্র“য়ারি আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। বিষয়টি সোমবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে উঠলেও খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়। খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার সানজীদ সিদ্দিকী এ সপ্তাহে শুনানি না করে সময়ের আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে।সানজীদ সিদ্দিকীর সঙ্গে এহসানুর রহমানও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। আদেশের পর তারা জানান, আগামী সপ্তাহে বিষয়টি আবারও কার্যতালিকায় আসবে।

খালেদার বিরুদ্ধে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির এ দুই মামলার বিচার চলছে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে। এর মধ্যে এক মামলায় বাদী দুদক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ হয়েছে।বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও জামিনে থাকা খালেদা নির্ধারিত দিনে আদালতে না আসায় পাঁচ দিন আসামির অনুপস্থিতিতেই বাদীর সাক্ষ্য শোনে আদালত। এ বিষয়টি উল্লেখ করে গত ২৫ মে জজ আদালতে হারুনুর রশিদের সাক্ষ্য বাতিলের আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা।ওইদিন শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার আসামিপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে দুই মামলায় বাদীর জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ জুন দিন ঠিক করে দেন।জজ আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধেই এবার হাই কোর্টে আবেদন নিয়ে এসেছেন খালেদার আইনজীবীরা। তারা বাদীর সাক্ষ্য বাতিল করে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আবারও সাক্ষ্য নেওয়ার নির্দেশ দিতে হাই কোর্টের কাছে আবেদন করেছেন। সেই সঙ্গে ওই সাক্ষ্য কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে রুল চেয়ে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ চাওয়া হয়েছে এই আবেদনে। এতে বিবাদী করা হয়েছে দুদক ও সরকারকে।

ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বলেন, পাঁচটি তারিখে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বদীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নিয়ম হল আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নিতে হয়। সর্বশেষ ২৫ মে সাক্ষ্য না নেওয়ার আবেদন জানানো হলে আদালত তা খারিজ করে দেয়। এ কারণেই আমরা হাই কোর্টে এসেছি।দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। পরের বছর ১৬ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

আর জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।২০১০ সালের ৫ অগাস্ট খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন হারুনুর রশিদ।গতবছর ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে দুই মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তার বৈধতা ও অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তবে তার আবেদনগুলো আপিলেও খারিজ হয়ে যায়।