দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ জুনঃ রাজধানিতে আলোচিত জোড়াখুনের আসামি সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির পিস্তলের গুলিতেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে রনি৷ রোববার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের- ডিএমপির গণমাধ্যম শাখায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম এ কথা জানান৷কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অবস্থানের কারণে এ মামলা তদন্তে রনিকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি৷মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জজ্ঞাসাবাদে রনি জানিয়েছে সে গাড়ির ভেতরে ছিল, গাড়ির কাঁচ নামিয়ে গুলি করেছে৷ সে যেটি বলেছে ও চালকের মুখ থেকে যা বের হয়েছে তাতে এরোপাতারি গুলি চালিয়েছে৷ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকায় গুলি করে দুজনকে হত্যার মামলায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি এমপির ছেলে হওয়ায় পুলিশ তাকে ছাড় দিয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন৷ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন তিনি৷মনিরুল বলেন, এটি একটি ক্লুলেস ঘ্টনা ছিল৷ এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে পুলিশের৷ ক্লুলেস ঘটনা তদন্তে ডিবি পুলিশ যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করে৷ এখানেও সেই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ঘটনাটি উদঘাটন করেছে এবং তাকে গ্রেফতার করেছে৷
তিনি বলেন, হত্যাকারীকে যেভাবে দেখা হয়, এ ঘটনায় এমপিপুত্রকেও সেভাবে দেখা হচ্ছে৷ তাই এখানে কারো সামাজিক পরিচয় দেখার সুযোগ নেই৷ আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তাই নেয়া হচ্ছে৷হত্যার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া লাইসেন্স করা পিস্তলটি পরীক্ষার জন্য সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে৷ সেটি পরীক্ষা করে দেখা হবে নিহতদের গায়ে যে গুলি লেগেছিল তা এই পিস্তলের কিনা৷আদালতে রিমান্ড প্রতিবেদনে পুলিশ বখতিয়ারকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আবেদন না করায়্ সাংসদপুত্রকে রক্ষা করা হচ্ছে— পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠায় ডিএমপি মুখপাত্র তার ব্যাখ্যা দেন৷ডিএমপি মুখপাত্র বলেন, কোনো ধরনের কোনো মহল থেকে চাপ প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই কোনো চাপ ও নেই ফলে স্বাধীনভাবে অন্য খুনিদের যেভাবে দেখা হয় বখতিয়ার আলম রনির কোনো পার্থক্য নেই৷ তার বাবার পরিচয় বা তার মাতার পরিচয় এবং তার সামাজিক- আর্থিক অবস্থানের কথা বিচার করার সুযোগ নেই৷গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে রনি গাড়ি থেকে গুলি ছুড়লে রিকশাচালক হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী আহত হন৷ পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান৷এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম গত ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন৷ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ মে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩১ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে৷ বখতিয়ার আলম রনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে৷চার দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার আসামি বখতিয়ারকে আদালতে হাজির করে ডিবি৷ এ সময় মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বখতিয়ারকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস৷অন্যদিকে বখতিয়ারের পক্ষে জামিন চেয়ে ও চিকিত্সার জন্য দুটি পৃথক আবেদন করেন তার আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ৷শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং জামিন আবেদনের বিষয়ে আগামী ১৬ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন৷