দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ জুনঃ পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মলিস্নকের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে৷রোববার আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেয়৷ রোববার আসামিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেন আইনজীবী আব্দুস সালাম খান৷ এর আগে গত ২ মে থেকে ১ জুন পর্যনত্ম তিন কার্যদিবস যুক্তিতর্ক পেশ করে প্রসিকিউশন৷মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে এ পর্যনত্ম ১৯ মামলায় ২১ আসামির বিরম্নদ্ধে রায় হয়েছে৷ এর মধ্যে ট্রাইবু্যনাল-১ এ ৯টি ও ট্রাইবু্যনাল-২-এ ১০টি মামলার রায় ঘোঘণা করা হয়েছে৷ ফোরকান মলিস্নকের রায় হবে ট্রাইবু্যনালের ২০তম ও ট্রাইবু্যনাল-২ এ ১১তম রায়৷
প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, আসামি ফোরকানের বিরম্নদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল ট্রাইবু্যনাল৷ প্রসিকিউশন বিচারকালে এসব অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণ পেশ করেছে৷ এ আসামির বিরম্নদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন দাবি করে সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেন প্রসিকিউটর বাদল৷ফোরকান মলি্লকের বিরুদ্ধে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর এ অভিযোগ গঠন করা হয়৷ ফোরকান মলিস্নক হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগি্নসংযোগ, ধর্মানত্মরকরণ ও দেশানত্মরকরণের মতো ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন৷ তার বিরম্নদ্ধে ৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মানত্মরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশানত্মরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুন্ঠন ও অগি্নসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ৷
ফোরকানের বিরম্নদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে ১৪ জন সাক্ষ্য দেয়৷ অন্যদিকে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যনত্ম ফোরকান মলিস্নকের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন চারজন সাফাই সাক্ষী৷ তারা হলেন- ইসহাক আলী খান, মৃদুল চন্দ্র সেন মধু, গোবিন্দ কুন্ডু৷মামলায় ফোরকান মলি্লকের বিরুদ্ধে গতবছর ২ ডিসেম্বর আনুষ্টানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয় ট্রাইবু্যনাল৷ এ আসামির বিরুদ্ধে গত ১৭ নভেম্বর আনুষ্টানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন৷ গত ৩ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ফোরকান মলি্লককে আটক রাখার আদেশ দেয় ট্রাইবু্যনাল৷ গত ২৫ জুন ফোরকান মলি্লককে বরিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা৷
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার ছিলো যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা৷ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশী আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে৷ সরকার গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত প্রসত্মাব গৃহীত হয়৷ এরপর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইবু্যনাল, তদনত্মকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম গঠন করা হয়৷ প্রথমে ১টি ট্রাইবু্যনালে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ পরে এ বিচারকে তরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরো একটি ট্রাইবু্যনাল গঠন করা হয়৷ বিচারিক কার্যক্রম শেষে এ পর্যনত্ম ট্রাইবু্যনাল-১এ ৯টি ও ট্রাইবু্যনাল-২ এ ১০টি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়৷ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দশটি রায় হলো৷
ফোরকানের ৫ যুদ্ধাপরাধ: অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালে বাংলা আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে (২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে) কোনো একদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফোরকান মলি্লক ও তার সঙ্গী রাজাকার সদস্যরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে যায়৷ সেখানে হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে তারা৷ তাদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে একমাস আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়৷অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের আষাঢ় মাসের শেষদিকে (২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে) একদিন ফোরকান মলি্লক ও তার রাজাকার সঙ্গীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলী গ্রামে নিয়ে যায়৷ সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করে তারা৷
অভিযোগ ৩: একাত্তরের ১২ অগাস্ট থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ফোরকান মলি্লক ও রাজাকার সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়৷ সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডাক্তার দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রাণীকে আটক করে তারা৷ ওই গ্রামে তারা হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়৷অভিযোগ ৪: ভাদ্র মাসের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত (২২ থেকে ২৫ অগাস্ট) ফোরকান মলি্লক ও তার রাজাকার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে কাকড়াবুনিয়া বাজারে যায় এবং হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়৷অভিযোগ ৫: ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (২৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর) সময়ে একদিন ভোরে ফোরকান মলি্লক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের যায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়৷