দৈনিকবার্তা-নড়াইল, ১৪ জুন: বাংলাদেশের সংস্কৃতির রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং সমগ্র বিশ্বে এখন সমহিমায় সমাদ্রিত। নাটক, সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তিসহ সংস্কৃতির সকল শাখায় বাংলাদেশ উজ্জ্বল সাক্ষর রেখেছে। যুগে যুগে এদেশে জন্ম নিয়েছে বিরল প্রতিভার অধিকারী কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পী, বাউল সাধক এবং সংস্কৃতমান মানুষ। কবিয়াল বিজয় সরকার তাঁদেরই একজন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমী নড়াইলের ব্যবস্থাপনায় আগামীকাল ১৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ৬.৩০টায় নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে কবিয়াল বিজয় সরকার স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে নড়াইল জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, নড়াইল জেলা শাখা অ্যাডভোকেট সুভাস চন্দ্র বোস, অধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত মুন্সী মোঃ হাফিজুর রহমান, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইল জেলা শাখা মলয় কুমার কু-, চারণকবি অধ্যক্ষ মোঃ রওশন আলী, বীরমুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবির, নারীনেত্রী ও সমাজকর্মী রওশন আরা কবির, চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন এর যুগ্ম আহ্বায়ক এম এম আকরাম শাহীদ চুন্নু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নড়াইল জেলা প্রশাসক আঃ গাফফার খান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব সাইফুল হাসান মিলন।
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিজয়গীতি পরিবেশন করবেন শিল্পী মৃত্যুঞ্জয় রায়, মঙ্গল রায়, চম্পা সিংহ, প্রতুল হাজরা, জয়া দাস, অর্পিতা সূত্রধর, কানাই লাল কু-, ড.পবন বিশ্বাস, বিপ্লব বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম, সমিরন বিশ্বাস, সলকা বিশ্বাস প্রমূখ। পরিচিতি : বিজয় সরকার নড়াইলের ডুমদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম বিজয় অধিকারী। কবিতার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে পাগল বিজয় সমধিক পরিচিত। তাঁর পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতার নাম হিমালয়া কুমারী। তিনি স্থানীয় টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে নেপাল বিশ্বাস নামক একজন শিক্ষকের কাছে যাত্রাগানের উপযোগি নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন। ১৯২৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনোহর সরকারের কাছে কবিগান শেখেন।
কিছুদিন পর তিনি রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁরকাছেও কবিগানের তালিম নেন। ১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজের একটি গানের দল করেন এবং কবিয়াল হিসেবে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি গানের কথা ও সুর করতেন। ভাটিয়ালী সুরের উপর ভিত্তি করে তাঁর ধুয়াগানের জন্য তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। তিনি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, আব্বাসউদ্দীন আহম্মদ প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন। বিজয় সরকার প্রায় ৪০০ সখি সংবাদ এবং ধুয়াগান রচনা করেন। এর মধ্যে কিছুকাজ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়।
তিনি বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং রেডিও, টেলিভিশনেও কবিগান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে তিনি প্রায় ৪০০০ হাজার আসরে কবিগান পরিবেশন করেন। এছাড়া তিনি রামায়ন গানও পরিবেশন করতেন।বিজয় সরকারের পারিবারিক উপাধি ছিল বৈরাগী। তিনি নিজে বৈরাগী উপাধি ত্যাগ করে অধিকারী উপাধি গ্রহণ করেন। কবিয়াল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার পর তিনি অবশ্য বিজয় সরকার নামে পরিচিত হন। তিনি ১৯৮৫ সালে ০৩ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে/সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, পোষাপাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবিনাই মনে, তুমি জানোনারে প্রিয়/তুমি মোর জীবনের সাধনা প্রভৃতি অন্যতম।