Thakrgaon Aboriginal Pic_1

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ১৩ জুন ২০১৫:  ঠাকুরগাঁও শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঠিক পিছনেই রামদাড়া খালের পাশ ঘেঁসে এই শহরের পরিচ্ছন্নকর্মীদের বাস। এখানে প্রায় ২০ শতক জমির উপর ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবারের বাস। এলাকাটি পরিচিত সুইপার পট্টি হিসেবে। পৌরসভা থেকে তাদের জন্য কয়েকটি ঘর তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্বল্প পরিসরে একটির সাথে একটি ঘর ঘেঁসে নিজেরাই ছোট ছোট ঘর তুলেছে। তারা শহর পরিস্কারের দায়িত্বে থাকলেও নিজেরা বাস করে ময়লা আবর্জনার মধ্যে। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছেলে মেয়ে নিয়ে তারা দিব্যি বাস করছে।

এ ব্যাপারে জীবন (২১) ও ললিতা (২০) জানায়, বাপ দাদার আমল থেকেই এভাবে তারা বাস করে আসছে। তাই তারা কোন সমস্যা মনে করছেনা। তারা জানায়, তাদের সম্প্রদায়ের লোক সংখ্য আগে কম ছিল। এখন সংখ্যায় তারা বেশি। তাই নিজেদের এলাকা অপরিস্কার হয় বেশি, পরিস্কার রাখতে পারেনা তারা। এই পরিচ্ছন্নকর্মীদের এলাকার বাসিন্দা প্রায় ৯০ বছরের শিবু নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে জানান, তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাননা। তাঁকে কেউ ডাকেওনা।

শিবু জানান, পৌরসভার একজন নাগরিক হিসাবে তারা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সামাজিকভাবেও তারা অবহেলিত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও পাননি তিনি। সেসময় বিদ্যালয়ে যাওয়ার তাদের সুযোগ ছিলনা। এখন তাদের সন্তানেরা স্কুলে যায়, তবে শিক্ষকেরা তাদের পছন্দ করেননা। তাদের সন্তানেরা শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে পারেনা। বাংলা ভাষা না বোঝার কারনে সন্তানেরা স্কুল যেতে চায়না। তাছাড়া অন্য ছেলে মেয়েরা তাদের সন্তানদের পাশে বসতে দেয়না, কথা বলেনা। এমনকি তাদের খেলতেও নেয়না।

ইএসডিও নামে একটি এনজিও সামাজিক সুবিধা বঞ্চিত এই শিশুদের জন্য সূর্যমুখী দলিত ইকো পাঠশালা নামে একটি শিক্ষা কেন্দ্র চালু করেছে কয়েক বছর আগে। তবে শিক্ষার ব্যাপারে দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনো সচেতন হয়ে উঠেনি। শিবু জানান, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলেও তারা সু-চিকিৎসা পাননা। নানাভাবে তাদের হয়রানী হতে হয়।

সুইপার পট্টিতে ঘুরে দেখা যায়, এতগুলো পরিবারের জন্য পৌরসভা খেকে একটি মাত্র নলকুপ ও একটি লেট্রিন দেয়া হয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। তারা নিজ উদ্যোগে কয়েকটি কাঁচা লেট্রিন তৈরি করেছেন, যা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। তারা খোলা স্থানেই মলমুত্র ত্যাগ করে। টিউবওয়েলও চুরি হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তাই নিরাপদ পানীয় জলও পাননা পরিচ্ছন্নকর্মীরা।

বয়স্ক কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী জানান, শহরের পরিবেশ ভালো রাখার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ ভাবেনা। তারা কিভাবে বাস করে তার খোঁজ নেয়না কেউ। তারাও চায় একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে সুযোগ সুবিধা ও অধিকার। তারা এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়রের সহযোগিতা চান।